বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
আজকাল কমবেশি আমরা সবাই ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। অফিসের লাঞ্চ হোক কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ক্যাফে কিংবা রাস্তার পাশের দোকানে পরোটা, চাউমিন কিংবা নানা স্বাদের রোল—এসব খাওয়ার ফলে শরীরে বাড়ছে ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাব।ইউরিক অ্যাসিড হল একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ যা পিউরিন নামক পদার্থ ভেঙে তৈরি হয়। পিউরিন সাধারণত কিছু খাবার এবং পানীয়ে পাওয়া যায়, যেমন রেড মিট, সামুদ্রিক খাবার, মদ ইত্যাদি। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন গেঁটেবাত (গাউট), কিডনিতে পাথর, এবং অন্যান্য জটিলতা। প্রথম দিকে অনেকেই এই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে অবহেলা করেন। যার ফলে পায়ের তলায়, হাঁটুতে, কনুইয়ে ব্যথা শুরু হয়। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে পায়ের পাতা ফুলেও যায়। আর এ থেকেই শুরু হয় বাত বা আর্থারাইটিসের সমস্যা।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ:
গেঁটেবাত বা গাউট: হাঁটু, গোড়ালি, বা পায়ের আঙুলে তীব্র ব্যথা এবং ফোলাভাব।
কিডনিতে পাথর: ইউরিক অ্যাসিড জমে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে।
জয়েন্টে ব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং জয়েন্ট ফুলে যাওয়া।
প্রস্রাবে সমস্যা: ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যদি শুরুতেই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে সমস্যাকে প্রথমেই দমন করা সম্ভব। না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। প্রথমে ব্যথা দিয়ে শুরু হলেও, ইউরিক অ্যাসিড কিন্তু আপনার কিডনি ও হৃদপিণ্ডের জন্য মোটেও ভালো নয়।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের উপায়:
পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন: যেমন রেড মিট, অর্গান মিট (লিভার, কিডনি), সামুদ্রিক খাবার (শেলফিশ)।
পর্যাপ্ত জল পান করুন: দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন।
ফল ও শাকসবজি খান: বিশেষ করে চেরি, লেবু, আপেল, এবং সবুজ শাকসবজি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
অ্যালকোহল ও সুগার ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন: এগুলো ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা ধরা পড়লে সাধারণত খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় অনেক কিছু। পালং শাক, টমেটো, মুসুর ডাল, পাঠার মাংস, মাছের তেল, কফি, কেক – এগুলো একেবারেই খাওয়া চলবে না। তবে কিছু খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খেলে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্যকারী খাবার:
চেরি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চেরি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
লেবু: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায়।
আপেল: ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ আপেল ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডালিম: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ডালিম ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।