“গুরু”

অমৃত কথা

যাঁর কোন মূর্ত্ত আদর্শে কর্ম্মময় অটুট আসক্তি সময় ও সীমাকে ছাপিয়ে তাঁকে সহজভাবে ভগবান্ করে তুলেছে, যাঁর কাব্য, দর্শন, বিজ্ঞান মনের ভালোমন্দ বিচ্ছিন্ন সংস্কারগুলিকে ভেদ করে ঐ আদর্শেই স্বার্থক হয়ে উঠেছে – তিনিই সদগুরু।
যিনি প্রেমের অধিকারী, নিঃসন্দেহচিত্তে তাঁরই অনুসরণ কর, মঙ্গলের অধিকারী হবেই হবে।
সদগুরুর শরণাপন্ন হও, সৎনাম মনন কর, আর সৎসঙ্গের আশ্রয় নিয়ে তেমনি করেই চলতে থাক – আমি নিশ্চয় বলছি, তোমাকে তোমার উন্নয়নের জন্য ভাবতে হবে না।
গুরুমুখী হতে চেষ্টা কর, আর মনের অনুসরণ করো না — উন্নতি তোমাকে কিছুতেই ত্যাগ করবে না।
গুরুকে আমার বলে জানতে হয় — মা, বাবা, পুত্র ইত্যাদি বাড়ীর লোককে ভাবতে গেলে যেন তাঁর মুখও মনে পড়ে।
সব সময় তাঁকে অনুসরণ করতে চেষ্টা কর, তিনি যা’ বলেন যত্নে তা’ রক্ষা করে অভ্যাসে চরিত্রগত করতে নিয়ত চেষ্টা কর – আর তাই সাধনা।
তুমি গুরুতে বা সৎ-এ চিত্ত সংলগ্ন করে আত্মোন্নয়নে যত্নবান্ হও। অন্যে তোমার বিষয়ে কি বলছে দেখতে গিয়ে আকৃষ্ট হয়ে পড়ো না — তা-হলে আসক্ত হয়ে পড়বে, আত্মোন্নয়ন হবে না।
যদি পরীক্ষক সেজে অহঙ্কার নিয়ে সদগুরু কিংবা প্রেমী সাধুগুরুকে পরীক্ষা করতে যাও, তবে তুমি তাঁ’তে তোমাকেই দেখবে, ঠকে আসবে।
সদগুরুকে পরীক্ষা করতে হলে — তাঁর নিকট সঙ্কীর্ণ সংস্কার-বিহীন হয়ে ভালবাসার হৃদয় নিয়ে, দীন এবং যতদূর সম্ভব নিরহঙ্কার হয়ে যেতে পারলে তাঁর দয়ায় সন্তুষ্ট হওয়া যেতে পারে।
তাঁকে অহং-এর কষ্টিপাথরে কষা যায় না, কিন্তু তিনি প্রকৃত দীনতারূপ ভেড়ার শিং-এ খণ্ডবিখণ্ড হন।
হীরক যেমন কয়লা-প্রভৃতি আবর্জনায় থাকে, উত্তমরূপে পরিষ্কার না-করলে তার জ্যোতিঃ বেরোয় না, তিনিও তেমনি সংসারে অতি সাধারণ জীবের মত থাকেন, কেবল প্রেমের প্রক্ষালনেই তাঁর দীপ্তিতে জগৎ উদ্ভাসিত হয়। প্রেমীই তাঁকে ধরতে পারে; প্রেমীর সঙ্গ কর, সৎসঙ্গ কর — তিনি আপনি প্রকট হবেন।
অহংকারীকে অহংকারী পরীক্ষা করতে পারে। গলিত অহংকে কি করে সে জানতে পারবে? তার কাছে একটা কিম্ভুতকিমাকার — যেমন অজ-মূর্খের কাছে মহাপন্ডিত।
কোন মহাপুরুষের সঙ্গে তোমার নিজের তুলনা করো না, কিন্তু সর্বদা তাঁর অনুসরণ কর।
গুরু হতে চেয়ো না, গুরুমুখ হতে চেষ্টা কর — আর গুরুমুখতাই জীবনের প্রকৃত উদ্ধারকর্তা।
সদগুরুর আদেশ পালনের মত আর মন্ত্র কী আছে? যিনি ছলে বলে কৌশলে — যেমন করেই হোক-না-কেন — সর্ব্বভূতের মঙ্গল চেষ্টায় যত্নবান্, তাঁরই অনুসরণ কর — মঙ্গলের অধিকারী হবেই হবে।
যিনি কোন-প্রকারে কাহাকেও দু:খ দেন না – অথচ অসৎ-এরও প্রশ্রয় দেন না – তাঁরই অনুসরণ কর, মঙ্গলের অধিকারী হবেই হবে। “সত্যানুসরণ”