সাইকেল চালান মাত্র ১৫ মিনিট তাতেই মিলবে সুস্থতা : বঙ্গবার্তার বিশেষজ্ঞ


ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়েরা বলেন সাইকেল চালানোটা শেখা বড় দরকার। কেউ হয়তো সময় থাকতেই শিখে নেন,কেউ আবার অলসতা বসত আর শিখে উঠতে পারেন না। তবে সাইকেল চালানো শেখা থাকলে তা মৃত্যু পর্যন্ত শরীরের কাজে লাগে। প্রতিদিন সাইকেল চালালে শরীরে অনেক রোগী বাসা বাঁধতে পারে না। তাই সাইকেল চালানোটা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। দিনে অন্তত ১৫ মিনিট সাইকেল চালালেই মিলবে সুস্থতা সাইকেল চালানোর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। সাইক্লিং হলো এমন এক ধরনের ক্রিয়াকলাপ যা মাঝারি থেকে হালকা তীব্রতার ওয়ার্কআউট বলে বিবেচিত হয়। ঠিক কত সময় আপনি সাইক্লিং করছেন তার উপরই নির্ভর করবে আপনার সুস্থতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১৫ মিনিট সাইকেল চালালে কেউ খুব বেশি ক্লান্ত বোধ করবেন না ঠিকই তবে অনেকখানি ক্যালোরি ঝরাতে পারবেন। অন্যান্য ব্যায়ামের তুলনায় সাইকেল চালানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা এইটি ।

এছাড়া কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সাইকেলের সুবিধা অনেক। পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি যানবাহনের চলাচলের খরচও বাঁচায় সাইকেল। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন বেড়েছে সাইক্লিংয়ের জনপ্রিয়তা।

কিছু কিছু দেশে তো সাইকেল চলাচলের জন্য বিশেষ লেন ও রাস্তাও আছে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক দৈনিক অন্তত ১৫ মিনিট সাইকেল চালালে শরীরে ঠিক কী কী ঘটে-
ওজন কমে অপ্রত্যাশিতভাবে
নিয়মিত সাইক্লিং করা ওজন কমাতে সাহায্য করে। সাইক্লিং কার্ডিও ওয়ার্কআউটের মধ্যে পড়ে। এর মাধ্যমে প্রতি ১৫ মিনিটে ১৫০-২০০ ক্যালোরি ঝরাতে পারবেন আপনি।

শরীরের নিম্নাঙ্গের যেমন-কোমর, হিপ, পায়ের রানের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাইক্লিং সবচেয়ে কার্যকরী ওয়ার্কআউট। শুধু সাইকেল চালানোর সময়ই নয় বরং এর পরেও ক্যালোরি বার্ন হবে। যা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

পায়ের পেশি অতিরিক্ত শক্তিশালী করে
অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে, খুব বেশি সাইকেল চালালে জয়েন্ট ও হাঁটুতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়টি কিন্তু ঠিক এর উল্টো, অর্থাৎ সাইকেল চালানো কখনো আপনার জয়েন্ট বা হাঁটুতে চাপ সৃষ্টি করে না।

বরং সাইকেল চালানোর সময় যে চাপ অনুভূত হয় তা পায়ের পেশিগুলোকে আরও শক্তিশালী করে। নিয়মিত মাত্র ১৫ মিনিট সাইকেল চালালে আপনার গ্লুটস, কোয়াডস ও হ্যামস্ট্রিং ফিট থাকবে।

ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে
বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করে যে, নিয়মিত সাইকেল চালানো (সেটি ১৫ মিনিট বা এক ঘণ্টাই হোক) মৃত্যুঝুঁকি কমায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আরেকটি গবেষণা প্রমাণ করে, সাইকেল চালানো ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায় সাইক্লিং। সাইকেল চালানোর সময় মস্তিষ্ক বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে যা চিন্তার গতি, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

এছাড়া সাইকেল চালালে খুশির হরমোন এন্ডোরফিনের মাত্রা বাড়ে, ফলে মেজাজ ভালো থাকে ও উদ্বেগ কমে। দৈনিক ১৫ মিনিট একটানা সাইকেল চালালে কর্টিসলের (স্ট্রেস হরমোন) মাত্রা কমে। ফলে রাতে ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্র সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে
নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে হৃদয়কেও সুস্থ রাখতে পারেন। কার্ডিওভাসকুলার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে সাইক্লিং। ৫ বছর ধরে পরিচালিত ১৫০০ জনের উপর করা এক গবেষণায় দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত যারা সাইকেল চালাতেন তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমেছে ৩০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদেরও দৈনিক কিছু সময় সাইকেল চালানোর পরামর্শ দেন। কারণ এতে হার্টবিট বাড়ে ও রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বার্ধক্যও অনেকটা আটকানো যায়
বার্ধক্যও আটকানো যায় নিয়মিত সাইক্লিং করলে। দ্রুত বা ধীরে আপনি যেভাবেই সাইকেল চালান না কেন তা আপনাকে ফিট থাকতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা নিয়মিত সাইকেল চালায় তাদের শরীরে মাইটোকন্ড্রিয়াল আয়তনের ঘনত্ব বেশি থাকে। শরীরে যত বেশি মাইটোকন্ড্রিয়া থাকবে আপনি ভবিষতে তত বেশি ফিট থাকবেন। নিয়মিত সাইকেল চালালে মেরুদণ্ড আরও শক্তিশালী হয় ও সোজা হয়ে বসার এই অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এই অভ্যাস পরবর্তীতে আপনাকে কুঁজো ও কোমরের পিছনের ব্যাথার সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।