বঙ্গবার্তা ব্যুরো ,
গেমসে ১০০ মিটার হার্ডলসে জ্যোতি ইয়াররাজি যখন তাঁকে টপকে সোনা জিতলেন, তখনই মনস্থির করে ফেলেছিলেন হুগলির জিরাটের মেয়ে মৌমিতা মণ্ডল। পরের ইভেন্ট ছিল লংজাম্প। মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। কিন্তু ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা মেয়েটা ক্লান্ত, অবসন্ন শরীর নিয়েও হার মানেনি। ফলশ্রুতি- ৬.২১ মিটার লাফিয়ে সোনা জয়। একই দিনে জোড়া পদক জিতে সিনিয়র ইভেন্টে বাংলার হয়ে নজির গড়লেন মৌমিতা।
বিকেল থেকে চেষ্টা করার পরে তাঁকে যখন রাতে ফোনে ধরা গেল তখনও উৎফুল্ল গলা। মোবাইল খারাপ হয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি। জানালেন, এর পরেই বাড়িতে ফোন করবেন। কেমন লাগছে? ২৩ বছরের মৌমিতার কথায়, “প্রথমে হার্ডলসে রুপো জেতায় কিছুটা মনখারাপ ছিল। কিন্তু লংজাম্পে সোনা জয়ের পরে সেই বিষণ্ণতা কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটাই আমার কেরিয়ারের সেরা প্রাপ্তি।”
হুগলির জিরাট স্টেশনে মৌমিতার বাবার চায়ের দোকান। মা গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের দিকে খুবই উৎসাহ ছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে আদর্শ রেখে এগোনোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ক্রিকেট খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। তাই তার পরে অ্যাথলেটিক্সে মনোনিবেশ করেন মৌমিতা।
শ্রীরামপুরে হার্ডলস শুরু করার পরে ভুবনেশ্বরে চলে যান মৌমিতা। সেখানে দু’বছর অনুশীলনের পরে মুম্বইয়ে রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশনের অ্যাকাডেমিতে চলে আসে মৌমিতা। সেখানে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছে সে।
রাজ্য সরকারের তরফে পদকজয়ী খেলোয়াড়দের জন্য চাকরি এবং আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সে কথা বলতেই মৌমিতা বলেন, “আমি পূর্ব রেলে চাকরি করছি। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার পাশে যেন দাঁড়ানো হয়। বাংলাকে অনেক দিন ধরে জাতীয় প্রতিযোগিতায় পদক দিয়ে এলেও তেমন কোনও সাহায্য পাইনি। তার ফলে একটা সময় মুম্বইয়ে সুযোগ পেয়ে বাধ্য হয়ে চলে আসতে হয়। প্রচারের আলো যেন আমাদের উপরেও পড়ে।”
গত বছরই ভুবনেশ্বরে ফেডারেশন কাপ অ্যাথলেটিক্স মিটে একশো মিটার হার্ডলস এবং লংজাম্পে জোড়া ব্রোঞ্জ পেয়েছিল মৌমিতা। সেখানে তাঁর সাক্ষাৎ হয় টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জয়ী নীরজ চোপড়ার সঙ্গে। তিনি কী পরামর্শ দিয়েছিলেন? মৌমিতা বলে, “নীরজ দেশের সবচেয়ে শৃঙ্খলাপরায়ণ অ্যাথলিট। একটাই কথা বলেছিলেন- ‘সাফল্যের কোনও চটজলদি সমীকরণ নেই। শুধু মাঠের মধ্যে নয়, মাঠের বাইরেও শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবে না।”
আগামী লক্ষ্য কী? মৌমিতা বললেন, “পরের বছর এশিয়ান গেমসে ভারতকে পদক দিতে চাই। তার আগে অবশ্য এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ফেডারেশন কাপেও সোনা জয় লক্ষ্য।”