“সৎ ও সত্য”

অমৃত কথা

যাহার অস্তিত্ব আছে এবং যাহার বিকাশ আছে তাহাই সত্য (real)।
বাঁচাটাকে বা থাকাটাকে যে ভাব বা অবস্থায় বিকশিত, প্রকাশিত ও বর্দ্ধিত করে তোলে — সেই হচ্ছে সত্যের প্রকৃত চেহারা।
তা’ হলেই বাঁচা ও থাকার বিকাশ, প্রকাশ ও বর্দ্ধন করে যা’ তা-ই যদি সত্য হয় – আবার ঐ বাঁচাবাড়া যাতে পুষ্ট ও বর্দ্ধিত হয় তা’কেই যদি হিত বলে, তবে যা’ লোকহিতপ্রদ তাইত সত্য হবে – নাকি?
সত্যকে দেখতে হলেই তাকিয়ে বুঝে’ দেখতে হবে কিসে অন্যের বাঁচা-বাড়াকে অবসন্ন ও নিহত না ক’রে নিজের বা কারুর বাঁচা-বাড়াকে পুষ্ট ও তুষ্ট করে তুলতে পারা যায় – আর তেমনি করে তা-ই কহা ও করাই হচ্ছে সত্য কহা ও সদাচার করা; আর এর পরিপন্থী যা-কিছু তা’ সবই মরণপন্থী, তাই মিথ্যা।
সৎ-এ তোমার আসক্তি সংলগ্ন কর – অজ্ঞাতসারে সৎ হবে; তুমি আপনভাবে সৎ চিন্তায় নিমগ্ন হও, তোমার অনুযায়ী ভাব আপনিই ফুটে’ বেরুবে।
সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না।
স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও।
অসৎ চিন্তা যেমন চাহনীতে, বাক্যে, আচরণে, ব্যবহারে ইত্যাদিতে ফুটে’ বেরোয়, সৎ চিন্তাও তেমনি উক্তরূপেই ফুটে’ বেরোয়।
সৎকথা বলা ভাল, কিন্তু ভেবে তদনুযায়ী চ’লে অনুভব করা আরো ভাল।
বলতে বিবেচনা ক’রো, কিন্তু ব’লে বিমুখ হয়ো না। যদি ভুল ব’লে থাক, সাবধান হও – ভুল ক’রো না।

অসৎ কথা বলার চেয়ে সৎ কথা বলা ভাল নিশ্চয়, কিন্তু বলার সঙ্গে কাজ করা ও অনুভব না থাকলে কি হলো? — বেহালা, বীণা যেমন বাদকানুগ্রহে বাজে ভাল, কিন্তু তারা নিজে কিছু অনুভব করতে পারে না।
সত্যকে আশ্রয় কর, আর অসত্যের অনুগমন করো না — শান্তি তোমাকে কিছুতেই ছেড়ে থাকবে না।
যাঁহার মন সৎ বা একাসক্তিতে পূর্ণ তিনিই সৎ বা সতী।
তোমার মন সৎ-এ বা ব্রহ্মে বিচরণ করুক, কিন্তু শরীরকে গেরুয়া বা রংচং-এ সাজাতে ব্যস্ত হয়ো না – তা’হলে মন শরীরমুখী হয়ে পড়বে।
সৎচিন্তায় নিমজ্জিত থাক, সৎকর্ম্ম তোমার সহায় হবে এবং তোমার চতুর্দ্দিক সৎ হ’য়ে সকল সময় তোমাকে রক্ষা করবেই করবে।
অসৎ চিন্তায় কুজ্ঞান বা মোহ জন্মে, তা’ পরিহার কর — দু:খ হতে রক্ষা পাবে।
তুমি অসৎ-এ যতই আসক্ত হবে ততই স্বার্থ-বুদ্ধিসম্পন্ন হবে, আর ততই কুজ্ঞান বা মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে — আর রোগ-শোক, দারিদ্র‍্য, মৃত্যু ইত্যাদি যন্ত্রণা তোমার উপর ততই আধিপত্য করবে — ইহা নিশ্চয়। ‘সত্যানুসরণ