Published By Subrata Halder, 04 May 2025, 03:07 pm
যেকোনো মানুষই স্বাস্থ্য ঠিক রাখবার জন্য সুষম খাবার গ্রহণ করেন। কেউই অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পছন্দ করেন না। তাই আপনি হয়তো স্বাস্থ্যকর খাবার খান, নিয়মিত এক্সারসাইজও করেন, তবুও কিছু অস্বস্তি আপনার শরীরে লেগেই থাকে। সব সময় ক্লান্তি ভাব, চুল পড়ে যাওয়া , চামড়ার শুষ্কতা অথবা মাংসপেশিতে নিয়মিত ব্যথা। এগুলো আপনাকে জানান দেবে যে আপনার শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব দেখা দিয়েছে।
এই লক্ষণগুলোই আপনার শরীরে কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হচ্ছে। সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ ভিটামিনের অভাবে ভোগেন, কিন্তু অনেকেই এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ সমস্যা ভেবেই অবহেলা করে এড়িয়ে যান।
ভিটামিন অভাব কী
ভিটামিনের অভাব প্রধানত দুই ধরনের-
প্রাইমারি ডেফিসিয়েন্সি: এটি খাদ্যের পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবেই হয়; যেমন- ভিটামিন সি-এর অভাবে স্কার্ভি রোগ।
সেকেন্ডেরি ডেফিসিয়েন্সি: শরীরের পুষ্টি গ্রহণ করবার ক্ষমতা ব্যর্থ হলে এ ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়; যেমন- সেলিয়াক ডিজিজ।
ভিটামিন ঘাটতির বিভিন্ন ৮টি অপ্রত্যাশিত লক্ষণ-
১. অবিরাম ক্লান্তি: ঘুম সম্পূর্ণ হলেও কি সারাদিন ঝিমুনি ভাব থাকে? এটি হতে পারে ভিটামিন ডি, বি-১২, আয়রন বা ফোলেট-এর ঘাটতির কারণে।
কি করতে হবে : সূর্যের তাপ নিতে হবে, ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
২. মাংসপেশিতে দুর্বলতা বা ব্যথা: হঠাৎই দেখছেন হাঁটু বা পায়ে ব্যথা হচ্ছে এর সম্ভাব্য কারণ ভিটামিন ডি, ই, ম্যাগনেসিয়াম বা বি ভিটামিন-এর অভাব।
কি করতে হবে: বাদাম, ডার্ক চকলেট, দুধ ও ফোর্টিফায়েড জাতীয় খাবার খেতে হবে। ৩. চুল পড়া বা পাতলা হয়ে যাওয়া: যদি ধরুন দিনে ১০০-এর বেশি চুল পড়ে যাচ্ছে তবে সতর্ক হোন। এর পেছনে থাকতে পারে বায়োটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-২ বা ফোলেট-এর ঘাটতি।
কি করতে হবে: ডিমের কুসুম, মসুর ডাল খান নিয়মিত।
৪. শুষ্ক ত্বক ও ড্যানড্রাফ: ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও যদি শুকনো হতে থাকে, তাহলে ভিটামিন এ, ই, সি, ওমেগা-৩ বা কলাজেনের ঘাটতি হতে পারে।
কি করতে হবে: গাজর, মিষ্টিকুমড়ো ও ফ্যাটি ফিশ খাওয়া প্রয়োজন।
৫. ক্ষত শুকাতে দেরি অথবা ঘন ঘন অসুস্থতা: আপনার কি ছোট কাটাছেঁড়া সারতে দীর্ঘদিন সময় লাগছে এটি দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার লক্ষণ। ভিটামিন সি, ই, কে বা জিঙ্কের অভাবে এমনটি হতে পারে।
কি করতে হবে : লেবু, বাদাম, পালং শাক ও সামুদ্রিক খাবার খেতে হবে বেশী করে।
৬. মুড সুইং বা অবসাদ: অকারণে খারাপ লাগা বা উদ্বেগের পেছনেও থাকতে পারে ভিটামিন ডি বা ভিটামিন বি-৬ এর অভাব।
কি করতে হবে : সামুদ্রিক মাছ, সূর্যমুখী বীজ, কলা খেতে হবে ও শরীরে রোদ লাগাবার প্রয়োজন ।
৭. দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া: রাতে কম দেখেন বা চোখে ঝাপসা লাগে? এটি ভিটামিন এ বা ই-এর ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে।
কি করতে হবে : গাজর, মিষ্টি আলু, কাঠবাদাম খাওয়া বিশেষ প্রয়োজন ।
৮. হাত-পায়ে ঝিঁঝি বা অবশ ভাব: হঠাৎই মনে হচ্ছে হাতে-পায়ে সূচ ফোটার মতো জ্বালা করছে এটা নার্ভের ক্ষতি হচ্ছে তার ইঙ্গিত দেয়। ভিটামিন বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়ামের অভাবে এমন হতে পারে।
কি করতে হবে : প্রচুর পরিমাণে ডিম, দুধ, সবুজ শাক ও বীজজাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন ।
এই বিভিন্ন লক্ষণগুলি দেখা দিলে আপনার ডায়েটের দিকে নজর করুন। প্রক্রিয়াজাত( প্রসেসড ) খাবার এড়িয়ে চলুন আর বেশি করে তাজা ফল, শাকসবজি, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখা বিশেষ প্রয়োজন ভিটামিন এ বা ডি-এর অতিরিক্ত মাত্রা ক্ষতিকর। তাই প্রয়োজনমতো নিজে নিজে কোন ওষুধ কিনে খাবেন না কারণ শরীরের কোনো রকম উপসর্গ উপেক্ষা করবেন না কারণ মূলত পুষ্টির অভাবই সারা জীবন সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই প্রতিনিয়ত শারীরিকচিকিৎসার জন্য সব সময়ই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন । কথায় বলে স্বাস্থ্যই সম্পদ তাই সেই সম্পদকে রক্ষা করতে পারলেই আগামী দিনগুলি আপনার ভালো কাটবেই কাটবে। ভালো খান নিয়মিত শরীর চর্চা করুন সুস্থ থাকুন এবং অপরকেও সুস্থ থাকবার জন্য অনুরোধ করুন।