চা বাগানের জমিতে কাউকেই ফ্রি হোল্ড নয়, বিভ্রান্তি কাটাতে জানিয়ে দিলেন মমতা

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
যে জমিতে চা এর উৎপাদন হয় সেই জমি কোনভাবেই অন্য শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হবে না। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথাই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে চা বাগানের ৩০ শতাংশ জমিতে পর্যটন শিল্পের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছিল। অতীতে এর পরিমাণ ছিল পনেরো শতাংশ। তাই নিয়ে উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে একটা বিরূপ আবহাওয়া তৈরি হয়। রাজ্য বিধানসভাতেও বিজেপি এই নিয়ে সরব হয়। বিধানসভার বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও সরকার পক্ষকে কাজ করায় তোলে। তারা দাবি করতে থাকেন, তৃণমূল সরকারের আমলে চার শিল্পের সর্বনাশ নেমে আসছে।


এসবের মাঝেই মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে ময়দানে নামে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, যেভাবে আদিবাসীদের জমি কেউ কিনতে পারেনা। একইভাবে এই সরকার নীতি নিয়েছে কোনভাবেই চা বাগানের কোন জমিকে ফ্রি হোল্ড দেওয়া হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিমূলক গুজব ছড়াচ্ছেন। কিছু ভুতুড়ে রাজনৈতিক দলও তাদের সঙ্গে আছেন। যারা একচুয়াল ঘটনাটা বুঝতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চা বাগানের জমি কাউকে ফ্রি হোল্ড দেওয়ার নিয়ম নেই। এটা লিজে থাকে। মুখোমুখি এও জানিয়েছেন এক্ষেত্রে চা বাগানের জমির জন্য যে নির্দিষ্ট সরকারি আইন ছিল তা একই রয়েছে। আমরা বলছি চা বাগানের যেখানে চা জন্মায় সেই জমি কোনভাবে ক্ষতি করা যাবে না। কিন্তু যেখানে চারজন মারছে না অথচ জমি পড়ে আছে, সেখানে ১৫ শতাংশ জমিতে টি ট্যুরিজম প্রজেক্ট এর জন্য অ্যালাও করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই শিল্পের মাধ্যমে হোটেল বা হোমস্টে তৈরি হলে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের চাকরির সংস্থান হবে। এক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছিল ৮০% লোকাল মানুষজনকে নিয়েই কাজ করতে হবে।


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিশ শতাংশে পর্যটন শিল্পের জন্য তারাই অনুমোদন পাবেন যারা অতীতে সবকিছু ঠিকঠাক করেছেন। এরপরেও ওই চা বাগানে পর্যাপ্ত জমি রয়েছে যেখানে চা উৎপাদন হয় না বা চায়ের সঙ্গে যুক্ত কোন কমার্শিয়াল কাজ হয় না। তারা আবেদন করতে পারেন সরকার ভেবে দেখবে। মুখ্যমন্ত্রী যেদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন চা প্লানটেশনের সঙ্গে কোনোভাবেই কোন আপোস করা হবে না। চায়ের চাষ হওয়ার পর যদি কোন বর্ধিত জমি থাকে যেখানে চায়ের চাষ হয় না সেখান থেকেই কমার্শিয়াল অ্যাক্টিভিটি করতে বলেছি যাতে পর্যটনের বিকাশ হয় এবং স্থানীয় ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।
৩০ শতাংশের অনুমোদন পেতে গেলে কি শর্ত আছে? এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যদি কেউ চা বাগান চালু রেখে পনের শতাংশ জমিতে কমার্শিয়াল যে শর্তগুলি রাখা হচ্ছে সেগুলি ঠিকমতো পূরণ করবে এবং স্থানীয় ছেলেমেয়েদের আশি শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে সফলভাবে ব্যবসা করতে পারে। এক্ষেত্রে যদি ওই চা বাগানে আরো অনেক জমি থাকে যেখানে চাষ হচ্ছে না তাহলে আবেদন করলে সরকার বিবেচনা করতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমরা মুখ্য সচিবের সঙ্গে বসে এই নিয়ে একটা এসওপি তৈরি করেছি। এই আবেদন গুলো সেখানেই আসবে। আমরা সেখানে দেখব, যদি সবকিছু ঠিকঠাক আছে। এবং সত্যিই তারা এলিজিবল। তাহলেই অনুমোদন পাওয়া যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী এটাও বলেছেন জমি দেওয়ার পর যদি দেখা যায় বছরের পর বছর কোন কাজ হয়নি, শর্ত ঠিকমতো মানা হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সংস্থান থাকছে।