পীযূষ চক্রবর্তী
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুন করার উদ্দেশ্য ছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি)। ছাত্র আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে হাসিনাকে খতম করাই উদ্দেশ্য ছিল ওই দুই জঙ্গি সংগঠনের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের একটা বড় অংশ তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিল। তবে দুটি জঙ্গি সংগঠন আলাদা হলেও সম্প্রতি হাসিনাকে বিতাড়িত ইস্যুতে তারা একে অপরের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করছিল। কিছুদিন আগেই আনসারুল্লা বাংলা টিমের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করে অসম পুলিশ। কোকরাঝাড়ের নামাপাড়া এলাকা থেকে আব্দুল জাহির শেখ ও সাব্বির মির্ধাকে গ্রেফতার করে অসম পুলিশের স্পেশাল ফোর্স। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিপুল সংখ্যক একে ৪৭ সহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের জেরা করে অসম পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি কয়েকজন কট্টরপন্থীর মধ্যস্থতায় দুই জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা রাজশাহীতে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকেই স্থির হয় হাসিনাকে উৎখাতের। এরই মাঝে জুলাই মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আর ওই আন্দোলনকেই হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে চেয়েছিল এই দুই জঙ্গি সংগঠন। ধৃত জাহির ও সাব্বির পুলিশের কাছে দাবি করেছে, তারা নিয়মিত বাংলাদেশ যেত। ছাত্র আন্দোলনের সময়ও জুলাই মাসে তারা বাংলাদেশ গিয়েছিল। তখনই হাসিনাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রদের মধ্যে জঙ্গিরা মিশে গিয়ে হাসিনার উপর আক্রমণ করবে। এই পরিকল্পনা নিয়েছিল এবিটি-র সদস্যরা। এবিটি-র পাশাপাশি জামাতও হাসিনাকে খুনের ছক কষেছিল। আর ওই সময় কট্টরপন্থী ও মৌলবাদীদের একটা বড় অংশের কাছ থেকে এই দুই জঙ্গি সংগঠন বিপুল টাকা পেয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছে ওই দুজন।
যেদিন হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন সেদিনও সাধারণ মানুষের বেশে কয়েকজন জঙ্গি তাঁর ভবনে ঢুকে লুটপাট চালিয়েছিল। সময় মতো হাসিনা পালিয়ে আসতে না পারলে ওই দিনেই অবশ্য তাঁকে খুন করা হতো। জেরায় জাহির ও সাব্বির সেকথা অসম পুলিশকে বলেছে। ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে, প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি জঙ্গি গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ভারতে ঢুকেছে। তাদের সিংহভাগই পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, মেঘালয় ও মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। বাকি জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।