পরিবারের অমতে ভালোবেসে বিয়ে কলেজ ছাত্রীর, প্রতিবাদে জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধ করল পরিবার

Published by Subrata Halder, 22 June 2025, 07:46 p.m.

বঙ্গবার্তা ব্যুরো, রমিত সরকার
ভালবেসে অন্য ধর্মের যুবককে বিয়ে করেছিল প্রথম বর্ষের এক কলেজছাত্রী। কিন্তু সেই ভালবাসার চরম মূল্য দিতে হল মেয়েটিকে। জীবিত থাকতেই তাকে মৃত ধরে নিয়ে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে, বিবাহিতা মেয়ের শ্রাদ্ধ করল তারই পরিবার! নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাস পঞ্চায়েতের খাটুরা উত্তরপাড়া গ্রামে এই মধ্যযুগীয় মর্মান্তিক ঘটনায় স্তম্ভিত গ্রামের মানুষ।
যুবতীর পরিবারের সিদ্ধান্তে, মেয়ের সমস্ত ছবি, জামাকাপড়, বইপত্র এমনকি পরিচয়পত্র পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ঘরের প্রতিটি কোনা থেকে মোছা হয়েছে তার অস্তিত্বের চিহ্ন। পরিবারের ভাষায়, তাদের কাছে কন্যা রাখি আজ থেকে মৃত।
প্রতিবেশীরা জানালেন, তরুণীর বাবা কর্মসূত্রে রয়েছেন ইজরায়েলে। মেয়ের এই অবাধ্যতা মানতে পারেননি তিনি। মেয়ের কাকা সোমনাথ বিশ্বাস আগেও বহু চেষ্টা করেছিলেন মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়েটি নিজের পছন্দের মানুষকে বেছে নেয়, ফিরে যায় তার স্বামীর কাছে। এরপরই পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় সম্পর্ক ছিন্ন নয়, সম্পর্কের সমাপ্তি। আর তার জন্যই
পুরোহিত ডেকে আয়োজন করা হয় শ্রাদ্ধের। মালা পরানো হয় মেয়ের ছবিতে। নিয়ম মেনে চলে সবকিছু যেন সত্যিই মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, তার জীবিত অস্তিত্ব কেই অস্বীকার করা হলো। ঘটনা জানাজানি হতেই প্রতিক্রিয়া ছড়ায়। কেউ কেউ পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও, অনেকেই বলছেন, ভালবেসে বিয়ে করা কি এমন অপরাধ, যার জন্য জীবন্ত একজন মানুষকে মৃত ঘোষণা করতে হবে? আর মেয়েত নাবালিকা নয়, তাই তার বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা আছে। এই নিয়েই নদিয়া জেলাতে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ধর্ম, সম্পর্ক, ভালোবাসা না পারিবারিক সম্মান কোনটির মূল্য বেশি ? আর কেই বা তা ঠিক করে দেবার অধিকারী ?
রাখির জীবনে ভালোবাসা এসেছে, কিন্তু সেই ভালোবাসার জন্যই চিরতরে হারিয়ে গেল তার পরিবার। সমাজের চোখে সে এখন ‘অপয়া’, পরিবারের চোখে মৃত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে,
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা কি পরিবারতন্ত্রের বা গার্হস্থ্য হিংসার কঠিন মনোভাবের প্রকাশ নয় কি?

07:21