
পীযূষ চক্রবর্তী: শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে প্রায় তিন বছর ধরে ছক কষে ছিল পাকিস্তান সেনা। আর সেই কাজে সুকৌশল ভাবে হাসিনার চরম শত্রু বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও আর এক কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ ইউনূসকে কাজে লাগায় পাক সেনা। ভারতের বন্ধু হাসিনাকে সরাতে পারলে পাকিস্তানের পাশাপাশি আর এক কট্টরপন্থী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে জিহাদি কার্যকলাপে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা যাবে। তবে ইউনূস বা খালেদা কেউই জানতেন না পাক সেনা সুকৌশল ভাবে তাঁদের উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ করে হাসিনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তাই হাসিনাকে সরানোর জন্য ইউনূস যেমন ছাত্র সমাজকে পাশে গিয়েছিলেন। ছাত্র সমাজকে ব্যবহার করে তিনি হাসিনার বিরুদ্ধে ভয়ংকর আন্দোলন করতে সফল হয়েছিলেন। অপরদিকে কট্টরপন্থীদের নেত্রী হিসেবে পরিচিত খালেদা মৌলবাদী শক্তি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জেলে থেকেই হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন। হাসিনার পতনের পর ইউনূসকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করলেও দুবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদার অবশ্য কিছুই জোটেনি। হাসিনার পর তিনিই বাংলাদেশের বেশি বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ১৯৯১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। পাঁচ বছর শাসন করার পর ১৯৯৬ সালে তাঁকে সরিয়ে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০১ সালে ফের পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা।
প্রথম পর্বে কট্টরপন্থীদের সঙ্গে ততটা গভীর সম্পর্ক না থাকলেও ২০০১ সালের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাঁর রাজত্বকালে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্ত ধরা পড়ে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ওই সময় চরম অত্যাচার হলেও প্রশাসনকে পুরোপুরি নীরব থাকতে বলা হয়। পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগ ওঠে খালেদার বিরুদ্ধে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত রাজত্ব করার পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এলে খালেদার বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেন হাসিনা। গ্রেফতার করা হয় একের পর এক কট্টরপন্থী নেতাকে। গ্রেফতার করা হয় খালেদাও।
তবে জেলবন্দি থাকলেও খালেদার সঙ্গে সে দেশের মৌলবাদীদের সুসম্পর্ক অটুট থাকে। হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় কট্টরপন্থী ও মৌলবাদীদের একটা বড় অংশ ছাত্র সমাজকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করেছিল। সেই খালেদা বড় কোনও পদ না পাওয়ায় ইউনূসের বিরুদ্ধে এবার গেরিলা পদ্ধতি অবলম্বন করতে চলেছেন। সূত্রের খবর, জেল থেকে বেরনোর পর ইতিমধ্যেই খালিদা সে দেশের বেশ কিছু করতে কট্টরপন্থী নেতার সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন। যে কট্টরপন্থী নেতারা জামাত সহ মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সরাসরি সমর্থন করে থাকেন। বড় কোনও পদ না পেয়ে এবার খালেদা সুকৌশলে ইউনূসকে বিপদে ফেলার জন্য একদিকে কট্টরপন্থীদের ক্ষেপানোর কাজ শুরু করছেন তো অন্যদিকে কোটা বিরোধী ছাত্র সমাজকে এবার ইউনূসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার ডাক দিচ্ছেন। কারণ যে কোটা বিরোধী নীতির জন্য ছাত্র সমাজ হাসিনার বিরুদ্ধে ভয়ংকর আন্দোলন করেছিল, সেই কোটা সিস্টেম কিন্তু ইউনূসের আমলে রয়েই গেছে। তাই আগামী দিন যে ইউনূস বনাম খালেদা যুদ্ধ যে হতে চলেছে তা বলাই যায়।