পীযূষ চক্রবর্তী,
দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে ডেথ সার্টিফিকেট পেল আরজি কর হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবার। বুধবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম নির্যাতিতার বাড়িতে যান। সেখানে তার বাবা-মায়ের হাতে তিনি ডেথ সার্টিফিকেট তুলে দেন। আর প্রশ্ন উঠছে সেখানেই, আমেরিকার মহাকাশচারী মহিলা সুনিতা উইলিয়ামস ৮ মাস মহাকাশে কাটিয়ে ফিরে আসতে পারলেন। আর সল্ট লেক স্বাস্থ্য ভবন থেকে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর পানিহাটি পৌঁছতে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের লেগে গেলো প্রায় ৯ মাস। কিন্তু কেনো, রাস্তা তো কয়েক কিলোমিটার তবে এত সময় লাগলো কেনো। কন্যা হারা বাবা মা কে মেয়ের মৃত্যুর সার্টিফিকেট পেতে ঘুরতে শুদ্ধু হলো কেনো।
আছে উত্তর আছে, চোখ দিয়ে দেখলেই দেখতে পাবেন। সুনিতারা গিয়েছিলেন ৮ দিনের জন্য, গিয়ে মহাকাশ যান বিকল হয়ে যায়। ওদের ফেরাও আটকে যায়। ঠিক এমনই হাসপাতালে কর্তব্য রত প্রতিশ্রুতিমান ডাক্তার কে মেরে ফেলা হচ্ছে, বাবা মা কে দেখতে না দিয়ে পুলিশের নিরাপত্তায় দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য ভাঙচুর করা হচ্ছে, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, থানার অফিসার দের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে রাজ্যের মানুষ। স্বাস্থ্য সচিবের ও পদত্যাগের দাবীতে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান বিক্ষোভ চলেছে, তাই তিনিও আটকে গিয়েছেন। ঘটনা ফিকে হতে শুরু করেছে, আর মানুষের ক্ষোভ নেই, ইলন মাস্কের মতোই অদৃশ্য ক্ষমতার যান পেয়ে গেলেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। বরং তিনি অনেক দূরদর্শিতা রাখেন, কাল বিধান সভায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা মুখ্য মন্ত্রী আরজিকর প্রসঙ্গ তুলে ফের বিষয় টি উস্কে দিতেই, স্বাস্থ্য সচিবের গাড়ি ও ছুটলো পানিহাটি। মনে মনে বললেন হয় হয় সব ই হয়, জানতি পারো না।তবু বলি সেই ঘটনা, ২০২৪ এর ৯ই আগস্ট আজজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ওই হাসপাতালেরই সেমিনার হল থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়। ধর্ষণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই মামলায় ইতিমধ্যেই শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। তবে বারবার পুলিশ ও সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তদন্তের পাশাপাশি তারা নির্যাতিতার ডেট সার্টিফিকেট না পাওয়ায় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। অবশেষে বুধবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব তাদের বাড়িতে গিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে আসায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট নির্যাতিতার বাবা-মা। নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘স্বাস্থ্যসচিব আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমার মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেটের মূল কপিটা দিয়ে গেলেন। সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমরা চেষ্টা করছিলাম ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য। ৩১ জানুয়ারি লিখিত দিয়েছিলাম। অনেক ঘোরাঘুরি করার পর হঠাৎ স্বাস্থ্যসচিব নিজে এসেই দিয়ে গেলেন।’ পাশাপাশি তিনি এও বলেন, মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য বাবা-মায়ের ঘোরাঘুরি কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যায় না।’ নির্যাতিতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা ছিল। সেটা দিয়ে এলাম।
কাকতালীয়ভাবে এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় আরজি কর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, আরজি করের মেয়েটি বিচার পাক।’ তবে এদিন ডেট সার্টিফিকেট হাতে পেয়েও নির্যাতিতার বাবা-মা বাকি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন জারি থাকবে বলেও জানিয়ে দেন।
