Published By Subrata Halder on 4th April at 12:04pm
বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
সরকারি চাকরি বাতিলের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে যখন চরম উত্তেজনা, তখন তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও পোস্টে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, চাকরি হারানো ২৬ হাজার মানুষের উদ্দেশ্যে এই বার্তা নয়, তবে তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা টেনে যেভাবে চাকরি চলে গেলে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একজন বিধায়ক কি পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন।
বিধায়ক নিজেই তার পোস্টে লিখেছেন, দয়া করে কেউ ভাববেন না, ২৬ হাজার চাকরি হারানো মানুষের জন্য এই পোস্ট দিচ্ছি। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এরপর তিনি ফিরে গিয়েছেন নিজের জীবনের পুরনো দিনগুলিতে। যাদবপুরে রিকশা চালানো থেকে শুরু করে ভারত টেলিভিশনের নাইট গার্ডের চাকরি পাওয়া এবং মাত্র ৮ মাসে সেই চাকরি হারানোর কাহিনি শোনাতে শোনাতে তিনি বলেছেন, চাকরি আজ আছে, কাল নাও থাকতে পারে। তখন কী করব, সেই প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে রাখতাম বলেই কোনও দিন পস্তাইনি।
মনোরঞ্জন লিখেছেন, চাকরি পেয়েও রিকশা বিক্রি করিনি। অনেকেই বলেছিল বিক্রি করে দে, পরে কেউ কিলো দরে কিনবেও না। আমি শুনিনি। কারণ জানতাম, চাকরি আজ আছে, কাল নাও থাকতে পারে। তিনি বলেন, সিপিএমের আন্দোলনের ধাক্কায় মাত্র ৮ মাসে ভারত টেলিভিশন বাংলা ছেড়ে হায়দরাবাদ চলে গেল। আমরা ১২০ জন কর্মচারী বেকার হলাম। সেদিন আমি কাঁদিনি, সোজা ফিরে রিকশার তালা খুলে চালাতে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
এই পোস্টে মনোরঞ্জনের বার্তা স্পষ্ট জীবনের অনিশ্চয়তা মেনে নিয়েই প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হয়। আজ যা আছি, কাল তা নাও থাকতে পারে, লিখে তিনি জানান, তাই কোনও প্রাপ্তি নিয়ে অহংকার করেন না, দম্ভ দেখান না। তবে তার এই পোস্ট ঘিরেই উঠছে নানা প্রশ্ন। যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চাকরি হারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, তখন দলে থেকেও এমন ব্যক্তিগত পোস্ট কতটা রাজনৈতিকভাবে সঙ্গত? তৃণমূলের ভিতরেই অনেকে মনে করছেন, এই বক্তব্যে পরোক্ষে চাকরি হারানোদের প্রতি সহানুভূতির বদলে মানসিক প্রস্তুতির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা দলের অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্য রাখে না। পোস্টটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও তীব্র মেরুকৃত। কেউ কেউ যেমন বিধায়কের কথাকে বাস্তব সম্মত বলছেন, তেমনই অনেকেই কড়া ভাষায় আক্রমণ করছেন তাকে ও তার দলকে।
জনৈক চঞ্চল কর্মকার মন্তব্য করেছেন, মাইরি, যুক্তির মা বাপ দিলেন। স্কুল শিক্ষক চাকরি যাওয়ার পর এখন রিক্সা চালাবে? না মুদিখানার দোকান খুলবে? কিছু লিখতেই হবে বলে লিখে দিচ্ছেন?
আর এক জন, শুভ্রজ্যোতি গাঙ্গুলী ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “তৃণমূলের নেতারা চাকরি চুরি করবে আর যোগ্য শিক্ষকরা তার দায় নিয়ে চাকরি খুইয়ে রাস্তায় রিক্সা চালাবে? বা ভাই বা, এই না হলে তৃণমূলের নেতা?
তবে কেউ কেউ বলছেন, বিধায়ক তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই কথাগুলো বলেছেন এবং তা থেকে অনেকেই অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।
তবু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই কথাগুলি কি শুধুই ব্যক্তিগত। নাকি এই বক্তব্যের ছায়া পড়বে দলের ভাবমূর্তিতেও।