বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলীয় বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি নির্বাচন কমিশনের মদতে ভুয়ো ভোটার অন্তর্ভুক্ত করছে এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন ভোটার তালিকায় কারচুপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা তাদের দফতরের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিবাদ অবস্থান করবো।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য নিযুক্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাই, কিন্তু জানেন কি, নতুন সিইসি আগে কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রকের সচিব ছিলেন, যার দায়িত্বে রয়েছেন অমিত শাহ! নির্বাচন কমিশনে অধিকাংশ নিয়োগ বিজেপির ইচ্ছেমতো হচ্ছে।
হাতে একগুচ্ছ নথি তুলে ধরে মমতা বলেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর এবং মুর্শিদাবাদের রানীনগর থেকে তথ্য এসেছে, যেখানে পুরনো ভোটারদের নাম কেটে দিয়ে নতুন ভোটার যুক্ত করা হচ্ছে, অথচ তাদের ছবি এবং আইডি নম্বর একই।
তিনি দাবি করেন, বিজেপি দুটি সংস্থাকে ভাড়া করেছে, যারা অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করছে। তিনি আরও বলেন, “এরা কোনও ময়দানি সমীক্ষা করেনি, কিছু সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং তথ্য অপারেটরের সাহায্যে ভোটার তালিকায় কারচুপি চালাচ্ছে। বাংলার মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না, এটা হতে দেব না।”
এই সমস্যা সমাধানের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যস্তরের একটি কমিটি গঠন করার ঘোষণা করেন মমতা। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রীরা। প্রতিটি ব্লকের ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে তারা কাজ করবেন।
মমতা জানান, অন্তত চারজন কমিটির সদস্য প্রতিদিন তৃণমূল ভবনে উপস্থিত থাকবেন এবং জেলার দলীয় কর্মীদের অভিযোগ শুনে তা সমাধান করবেন।
বিজেপির ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নীতির দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, “আমি বিজেপিকে বিশ্বাস করি না। ওরা লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করতেই পারে। সেক্ষেত্রে সব সাংসদদেরও এই তালিকা বিশুদ্ধ করার কাজে নামতে হবে।
তিনি নির্দেশ দেন, শুক্রবার থেকেই ব্লক স্তরে ভোটার তালিকা পর্যালোচনার কাজ শুরু করতে হবে এবং ১০ দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি দাবি করেন, “আমাদের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বিষয়টি আমার নজরে এনেছেন। বিজেপি মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতেও একইভাবে ভোটার তালিকায় কারচুপি করেছে। সেখানকার বিরোধীরা বিষয়টি ধরতে পারেনি, কিন্তু আমরা এই ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেছি। প্রতিটি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে, আমরা এটাকে অব্যাহত থাকতে দেব না।”
মমতার বক্তব্যে স্পষ্ট, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রশাসনিক স্তরেও দল সর্বশক্তি দিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।