বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
বিনিয়োগের জন্য কেন আদর্শ বাংলা? প্রত্যেক শিল্প সম্মেলনে তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চকে তিনি বেছে নিলেন বিরোধীদের জবাব ঝিদেওয়ার মঞ্চ হিসাবে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চাইলেন কেন তিনি বারবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মত এত বড় মাপের শিল্প সম্মেলন করেন। প্রত্যেক বছর এই শিল্পসম্মেলন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হলেই বিরোধীরা রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। বিনিয়োগের খতিয়ান নিয়ে কটাক্ষ করতে ও ছাড়ে না। এদিন সব কিছুরই জবাব দিলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন করাতে ভুল কি আছে আমাদের। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও কর্মসংস্থান তৈরি করা জরুরি। তার জন্যই চাই বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান ছাড়া নতুন প্রজন্ম বাঁচবে কি করে। আর সেই লক্ষ্যেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বিনিয়োগের আদর্শ পরিবেশ রয়েছে। বাংলার জিডিপি জাতীয় জিডিপির থেকেও বেশি। এখানে বিনিয়োগ করলে শিল্পপতিদের কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে বাংলা সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। আসুন বাংলায় বিনিয়োগ করুন।
বিগত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন গুলিতে যে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে তার পরিসংখ্যানও এদিন তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কথায়,এখনো পর্যন্ত ১৯.৫ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে ১২ লাখ কোটির বিনিয়োগ কার্যকর হয়ে গিয়েছে। বাকি পাইপলাইনে রয়েছে। এরপরই বিরোধীদের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি একমাত্র সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু যারা বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে রাজনীতি করছেন তাদের জবাবদিহি করতে রাজি নই।
এদিন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত বিভিন্ন ডেলিগেটদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্মঘট হয় না বাংলায়। এখানে ফিরেছে কর্মসংস্কৃতি। নারীর ক্ষমতায়নে শীর্ষে বাংলা। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পেও এক নম্বরে। পথ দেখাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, শিক্ষাশ্রী। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, কী হবে এই সম্মেলন করে? কিন্তু আমাদের দেখাদেখি অন্য সব রাজ্যও এমন ধরনের সম্মেলন করছেন। আর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই সম্মেলন জরুরি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এই বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে করেছেন তার মধ্যে রয়েছে ওয়ান স্টপ সিনার্জি কমিটি। শিল্পের যে কোন প্রস্তাব দ্রুত রূপদান করার জন্য যেই কমিটি সমস্ত দফতরকে নিয়ে কাজ করবে জানিয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই কমিটির মাথায় থাকবেন মুখ্য সচিব। এছাড়াও থাকবেন অন্যান্য দপ্তরের সচিব ও বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রের নেতারা । এদিন এই মঞ্চ থেকেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল ব্লক ডেউচা পাঁচামি নিয়েও এদিন এই মঞ্চ থেকে বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী কাল থেকে সেখানে উত্তোলন শুরু হচ্ছে। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৩৫ হাজার কোটির বিনিয়োগ হবে একই সঙ্গে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, দেউচা পাঁচামিতে প্রায় ১২৪০ মিলিয়ন টন কয়লা এবং ১৬০০ মিলিয়ন টান ব্যাসল্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ এই বিনিয়োগে অংশীদার হতে চাইলে স্বাগত। একইসঙ্গে স্থানীয় মানুষকে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন,রাজ্যে শিল্পগড়তে সবকিছু তৈরি আছে। জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ থেকে শুরু করে সবটাই হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, আগামী একশ বছরে বিদ্যুতের কোন অসুবিধা থাকবেনা।
এদিন এই মঞ্চ থেকেই ছয়টি ইকোনমিক করিডরের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারমধ্যে যেমন রয়েছে রঘুনাথপুর-তাজপুর, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-ঝাড়গ্রাম, ডানকুনি-কোচবিহার, খড়গপুর-মোরগ্রাম, গুরুডি-কলকাতা ইকোনমিক করিডোর। মুখ্যমন্ত্রীর দাবী এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত রাজ্যের চেহারা আমূল বদলে যাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবী, নারী ক্ষমতায়নে এ রাজ্যে যে কাজ হয়েছে তা আর কোথাও হয়নি। গোটা দেশের রাজনীতিকরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে এসেছে সংসদে। কিন্তু নির্বাচনী ক্ষেত্রে তাকে রূপদান করেছে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এই মুহূর্তে গোটা দেশে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সাংসদের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ। তার সরকার লক্ষীর ভান্ডার এর মাধ্যমে শুধু মহিলাদের হাতে টাকাই দেয়নি। তাদের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে।এই সাফল্য আরো অগ্রসর করতে বিনিয়োগ কারীদের আহ্বান জানান তিনি।
আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর
