বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
ব্যস্ততার কারণে না খেয়ে বা সকালে উঠে খালি পেটে ওষুধ খান অনেকে । অনেকে আবার জল না খেয়েই ওষুধ খেয়ে ফেলেন কারও কারও ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লেখার সময় সেটির প্রয়োগ পদ্ধতিও লিখে দেন চিকিৎসক। লেখা থাকে ভরা পেটে খেতে হবে কোনটি, আবার কোনটি খাবার পর।
খালি পেটে ওষুধ, শরীরে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পেটে খাবার না থাকলে পাকস্থলীর ভেতরের স্টমাক লাইনিং উন্মুক্ত থাকে। ফলে অনেক ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ, স্টেরয়েড বা কিছু ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট, এই আস্তরণে জ্বালা বা ক্ষত তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে লিভারের এই জ্বালা কেবল অম্বল বা বমি ভাবই নয়, অনেক সময় হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, গা শিরশির করা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে। যদি ওষুধ দ্রুত কাজ করে এবং পেট খালি থাকে, তবে সেটি খুব দ্রুত শরীরে শোষিত হয়। এতে শরীরের রক্তে গ্লুকোজ ও হার্টবিট হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আবার অনেক ওষুধ পেটের গ্যাস্ট্রিক মিউকোসা বা আস্তরণে সরাসরি প্রতিক্রিয়া করে। খালি পেটে এসব ওষুধ খেলে যেসব প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেগুলি এই রকম –
প্রথমত – গ্যাস্ট্রিক বা আলসার
ওষুধ সরাসরি পেটের দেয়ালে আঘাত করে, ফলে গ্যাস, ব্যথা, এমনকি আলসারও হতে পারে। বিশেষ করে ব্যথার ওষুধ খালি পেটে খাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।
দ্বিতীয়ত – বমি বমি ভাব বা বমি,
খালি পেটে কিছু ওষুধ খেলে বমিভাব হয় বা পেট খারাপ হতে পারে। এতে ওষুধ ঠিকমতো কাজও করতে পারে না।
তৃতীয়ত – ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়া,
কিছু ওষুধ সঠিকভাবে শোষিত হতে না পেরে কার্যকারিতা হারায়। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক বা আয়রনজাতীয় ওষুধ খালি পেটে খেলে তা সঠিকভাবে কাজ করে না।
চতুর্থত – দেহে জলশূন্যতা আরও খারাপ প্রতিক্রিয়া দিতে পারে
যখন শরীরে জল কম থাকে, তখন ওষুধের প্রভাব আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এটি কিডনি ও লিভারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।
যারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন
যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের সমস্যা আছে, বয়স্ক ব্যক্তি, যাদের হজমপ্রক্রিয়া ধীরগতির, যারা নিয়মিত পেইনকিলার বা অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছেন ও যারা কম জল খান বা গরমে ঘেমে শরীরে জল কমে যায় তাদের জন্য খালি পেটে এসব ওষুধ খাওয়া আরও বিপজ্জনক।
তাই ডাক্তার যদি বলেন ভরা পেটে খেতে হবে, তাহলে অন্তত হালকা খাবার খেয়ে ওষুধ খান। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জল নিয়ে ওষুধ খাওয়া জরুরি, কমপক্ষে আধ গ্লাস জল খান। খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে সরাসরি ওষুধ খাবেন না। আর কোনো ওষুধে সমস্যা হলে নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ না করে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
ওষুধ শরীর ভালো করার জন্য, কিন্তু ভুলভাবে খেলে সেটিই শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই নির্দেশ মেনে ও সতর্কতা নিয়ে ওষুধ খাওয়াটাই সচেতন মানুষের কাজ। ভরা পেটে মানে শুধু পেট ভরে খাওয়ার পর নয়, বরং হালকা খাবার খেয়ে নিরাপদে ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ ওষুধ শুধু খাওয়া নয়, সঠিকভাবে খাওয়া আসল চিকিৎসা। অর্থাৎ তবেই দ্রুত রোগ মুক্ত হবেন, বা তাতে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে।