পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বাজেট পেশ, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তৃণমূলের

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
চলতি অর্থবর্ষে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের বাজেট পেশ হলো বিধান সভায়। আজ এই বাজেট পেশ করেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। বাজেট ভাষণে তিনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে অভিযোগ করেন যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কেন্দ্র বাংলার গ্রামোন্নয়নের খাতের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে। আলোচনায় তৃণমূল বিধায়করাও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, কেন্দ্র গত দু’বছর ধরে আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছে না। বাংলার গরিব মানুষদের ভাতে মারার চক্রান্ত করছে বিজেপি সরকার। তার অভিযোগ, রাজ্য সরকার আগামী অর্থবর্ষে ৩৩ কোটি শ্রমদিবস তৈরির পরিকল্পনা করেছে।
তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, বকেয়া টাকা দিলে তবে ওদের ভোট বাড়বে? রাজ্যের দিকে চেয়ে না থেকে পঞ্চায়েতগুলোকেও আয় বাড়াতে হবে।
তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, বাংলাকে এত বঞ্চনা কেন? এটা বিজেপির চক্রান্ত। উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিতে চাইছে।
আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, একশো দিনের কাজের টাকা আদায়ের জন্য রাজ্য কেন সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে না? টাকা আটকে রাখা আমরা সমর্থন করতে পারি না। প্রসঙ্গত এদিনের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা অনুপস্থিত ছিলেন। একমাত্র বিরোধী বিধায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকী। জবাবি ভাষণে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ২০২১ সালে বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলা চারবার ১০০ দিনের কাজে দেশের সেরা রাজ্য হয়েছে। ২০২২ সালে ভারত সরকার নিজেই লিখেছিল যে সব হিসাব জমা পড়েছে, তবুও টাকা আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কেন্দ্রের শর্ত ছিল এক মাসের মধ্যে অযোগ্যদের বাদ দিতে হবে। আমরা সব কাটছাঁট করে ১১ লক্ষ ১ হাজার উপভোক্তার তালিকা তৈরি করেছিলাম, কিন্তু সেই টাকাও এখনও আসেনি। বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি জব কার্ড বাতিল হয়েছে। তবু তারা টাকা পাচ্ছে আমরা বঞ্চিত। কেন বাংলা বারবার বঞ্চিত হবে, সেই
প্রশ্ন তোলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী।
প্রদীপ মজুমদার এদিন বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রাজ্য ৩৩ কোটি কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যে ৪৭৪৬.৪০ কোটি টাকা অমজুরি উপাদানের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তি হিসেবে ৬০,০০০ টাকা প্রদান করেছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কেন্দ্র বাংলাকে বঞ্চিত করছে। আমাদের প্রাপ্য ১২-১৪ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। তারা ভেবেছিল গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা হতে দেননি। আমাদের অধিকারের লড়াই চলছে। তাঁর দাবি, ‘স্টেটাস অফ ডিভলিউশন টু পঞ্চায়েতস ইন ইন্ডিয়া – ২০২৪’ প্রতিবেদনে, যা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (IIPA) দ্বারা প্রস্তুত, বাংলাকে ‘উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন’ রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রদীপ মজুমদার এদিন বলেন,কম্পোজিট ডিভলিউশন ইনডেক্স (DI) অনুযায়ী বাংলার স্কোর ৫৬.৫২, যা জাতীয় গড় ৪৩.৮৯-এর তুলনায় অনেক বেশি। প্রসঙ্গত এদিন বিধানসভায় প্রদীপ মজুমদারের প্রস্তাবিত ৪৪,১২৮.৬৮ কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার বিধানসভায় অনুমোদিত হয়েছে।