Upload By K. Halder at 15th March 2025, 05:15 PM
বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিনটি হয়ে ওঠে নতুন সম্ভাবনা, আনন্দ এবং বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। পরা হয় নতুন পোশাক। বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হালখাতার প্রথা।

বাঙালির ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ হল এই হালখাতা। সেই হালখাতা ছাড়া আজও বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটা ভাবাই যায় না। চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিন, বৈশাখ মাসের প্রথম দিন বা পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে নতুন বছর শুরু হয়।এই দিনেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বা দোকানে লক্ষ্মী ও গণেশের পুজো এবং ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।
এক সময় হালখাতা ঘিরে অনেক ধূমধাম হলেও এখনকার দিনে তা অনেকটাই ফিকে। তবুও বাঙালি প্রতিষ্ঠানে হালখাতা আছে। ইতিহাস বলছে মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে নববর্ষ উদযাপনের প্রথা শুরু। ব্যবসায়ীরা সেই সময় থেকেই নাকি কেনাবেচার হিসেব রাখার জন্য শুরু করেন হালখাতার প্রথা।
বাংলা নববর্ষ ও পঞ্জিকা
বাংলা নববর্ষ মানেই পঞ্জিকা।বলা হয় বাংলা পঞ্জিকার ইতিহাস শুরু হয় ১২৭৬ বঙ্গাব্দে ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা থেকে। নাম ছিল ‘গুপ্তপ্রেস ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা’। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে ‘পি এম বাগচীর পঞ্জিকা’। এর সঙ্গে থাকত একটি ডাইরেক্টরি। এতে থাকত জেলার বিবরণ, চাকরির খবর, কলকাতার রাস্তার সুলুকসন্ধান, সরকারি বিভিন্ন বিভাগের ঠিকানা, যোগাযোগের উপায়, স্কুল-কলেজ, চিকিতসক ও জ্যোতিষীদের ঠিকানা। বাংলা পঞ্জিকা হলো বাঙালি সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী ক্যালেন্ডার, যা সূর্য-চন্দ্র গণনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি মূলত বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হয়, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ১৪ বা ১৫ এপ্রিলের সঙ্গে মিলে যায়।এই পঞ্জিকায় পয়লা বৈশাখ (বৈশাখের প্রথম দিন) নববর্ষ হিসেবে উদযাপিত হয়।এই পঞ্জিকা ধর্মীয়, সামাজিক ও কৃষিভিত্তিক উৎসবের তারিখ নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়, যেমন দুর্গাপূজা (আশ্বিন/কার্তিক), কালীপূজা (কার্তিক), নবান্ন (অগ্রহায়ণ)। ব্যবসায়ীরা হালখাতার জন্য এই পঞ্জিকা অনুসরণ করে।
পয়লা বৈশাখ ও খাওয়াদাওয়া
পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালির মনের অন্দরে অন্যকিছু।বাংলা বছরের নতুন দিন বলে কথা।নতুন পোশাক, নতুন সাজ তো আছেই তাঁর সঙ্গে যেটা অবশ্যই দরকার তা হল নতুন বছরে পাতে থাকা চমৎকার কিছু মেনু।বছরের প্রথম দিনে বাঙালির পাতে রঙিন, সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাবার সমারোহ থাকা চাই ই চাই। বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষ খাবার পান্তা-ইলিশ।বাংলাদেশে নববর্ষের দিন পান্তা ও ইলিশ মাছ খাওয়ার রীতি প্রচলিত। বলা হচ্ছে পান্তা-ইলিশ খাওয়া যতটা না বাঙালির ঐতিহ্যের তার চেয়ে বেশি ব্যবসায়িক প্রচারের। আজকাল শহরের পাঁচতারা হোটেল থেকে বড় রেস্তোরাঁ – নববর্ষে হাজির করে পান্তা-ইলিশের বিশেষ মেনু।তবে এর জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নও উঠে আসে—পান্তা-ইলিশ কি শুধুই উৎসবের বাহুল্য, না কি বাঙালির মাটির টান?
পয়লা বৈশাখ ও আজকের বাঙালি
পয়লা বৈশাখ বাঙালির ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতিফলন ঘটায়। রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ’ গান এই দিনের উৎসাহকে আরও গভীর করে। কাজেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বাঙালির পয়লার পথচলা। কিন্তু প্রশ্ন হল বাঙালির মননে কী বাংলা সন ও বাঙালির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির অবস্থান আগের মত আছে? বিশ্বায়নের এই সময়ে, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে জীবনধারার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে সামাজিক রীতিনীতি ও অভ্যাসের।ভিন রাজ্যে ও শহরে বাস বা বিদেশে চাকরি,আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সুবাদে ইংরেজি হিন্দির ব্যাপক ব্যবহার প্রভাব ফেলেছে সমাজজীবনে।গ্রামবাংলায় একরকম হলেও নগর সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ কেবল এক দিনের উৎসব-আনন্দের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।


























