লড়াইয়ের আর এক নাম সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিনেই তার জন্ম। তাই জন্মদিনটা বেশ একটা স্মরণীয় দিন হিসেবেই থাকে তার কাছে। যদিও মেয়েদের বয়স বলতে নেই। আর তিনি বাংলা অভিনয় জগতের সর্বকালের সেরাদের মধ্যে অন্যতম সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। কতদিন ধরে যে অভিনয় করছেন তা নিজেরই এখন গুলিয়ে যায়। সেই কোন বালিকা বেলায় সংসারের প্রয়োজনে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলন আজও সেই যাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সবার কাছে সাবুদি নামেই পরিচিত। বাংলা সিনেমার আর এক দিকপাল অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই অভিনয় জগতে আসা। নিজের প্রথম পছন্দ অবশ্য সিনেমা নয় থিয়েটার।
দেশ ভাগের পর পরেই এদেশে চলে আসা। চরম আর্থিক দূরাবস্থার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। মঞ্চে অভিনয়ের জন্য প্রথম দিন পাশের বাড়ি থেকে শাড়ি চেয়ে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। প্রথম অভিনয়েই সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন। সেই যে শুরু হল আজও তার বিরাম নেই। অভিনয়ে কেন এলেন? নিজেই তার জবাব দিয়েছেন। ইচ্ছে ছিল কানন বালা হবেন। হতে পেরেছেন কিনা জানেন না। এই ইচ্ছের একটা কারণও আছে । কানন বালা একবার ছোটবেলায় তাঁকে দেখে বলেছিলেন চোখ দুটো ঠিক তাঁর মতো।সেই থেকেই নিজেকে কানন বালা করে তুলতে চেয়েছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
দীর্ঘ জীবনে প্রায় ৪০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন। মঞ্চেও করেছেন অজস্র নাটক। বাংলা চলচ্চিত্রে বহু নায়ক, নায়িকার সঙ্গেই অভিনয় ক রেছেন। যাঁরা একডাকে পরিচিত। । উত্তম থেকে সৌমিত্র, সুচিত্রা থেকে সুপ্রিয়া বাদ নেই কেউই। এঁরা সবাই বাংলা সিনেমার এক একজন বিখ্যাত অভিনেতা, অভিনেত্রী। এঁরাও কিন্তু সাবিত্রীর সঙ্গে অভিনয় করতে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতেন। বাঙালির আইকন উত্তম কুমার নিজেই তাঁর এক পরিচিতকে চিঠিতে লিখেছিলেন সাবুর সঙ্গে অভিনয় করতে গেলে খুব সাবধানে থাকতে হয়। ওর মত অভিনেত্রী খুব কম হয়।
বাঙালি পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তোলা সুচিত্রা সেনও গ্রীন রুমে স্বগোতক্তি করে বলতেন, কত কিছুই তো করলে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মত অভিনয় করতে পারলে কই।
এহেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের এই বয়সেও আক্ষেপ তেমন ভালো চরিত্র পেলেন না। যেখানে মন প্রান ঢেলে অভিনয় করা যায়। আক্ষেপ আরও আছে বাংলার খ্যাতনামা পরিচালকরা তাঁকে তেমন ব্যবহারই করলেন না। সত্যজিত, মৃণাল সেন, তপন সিনহা, ঋত্বিক ঘটক কেউই তাঁকে সে ভাবে অভিনয়ের সূযোগ দেন নি।
সাবিত্রীর জীবনেও প্রেম এসেছিল নীরবে। কিন্তু কারুর ঘর ভাঙবেন না বলে নিজে ঘর বাঁধলেন না কোনওদিন। আজ এই বয়সে এসে তবু কোনও আক্ষেপ নেই, শুধু মাঝে মাঝে বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে।