"দুর্ব্বলতা"
সর্বপ্রথম আমাদের দুর্ব্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে – সাহসী হতে হবে, বীর হতে হবে। পাপের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি ঐ দুর্ব্বলতা। তাড়াও যত শীঘ্র পার, ঐ রক্তশোষণকারী অবসাদ উৎপাদক Vampire কে। স্মরণ কর তুমি সাহসী, স্মরণ কর তুমি শক্তির তনয়, স্মরণ কর তুমি পরমপিতার সন্তান; – আগে সাহসী হও, অকপট হও, তবে জানা যাবে তোমার ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।
হটে যাওয়াটা বরং দুর্ব্বলতা নয়কো, কিন্তু চেষ্টা না করাই দুর্ব্বলতা। তুমি কোন কিছু করতে প্রাণপণ চেষ্টা করা সত্বেও যদি বিফলমনোরথ হও – ক্ষতি নাই, তুমি ছেড়ো না, ঐ অম্লান চেষ্টাই তোমাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে।
যে পরিমাণে দু:খের কারণে মন সংলগ্ন হ’য়ে অভিভূত হবে, সেই পরিমাণে হৃদয়ে ভয় আসবে ও দুর্ব্বলতাগ্রস্ত হ’য়ে পড়বে। যদি রক্ষা পেতে চাও, ভয় আর দুর্ব্বলতা বলে কিছু রেখো না, সৎচিন্তা ও সৎকর্ম্মে ডুবে থাক।
দুর্ব্বল মন চিরকালই সন্দিগ্ধ – তারা কখনই নির্ভর করতে পারে না, তাই প্রায়ই রুগ্ন কুটিল ইন্দ্রিয়পরবশ হয়। তাদের নিকট সারাটা জীবন জ্বালাময়। শেষে অশান্তিতে সুখদুঃখ ডুবে যায়। কি সুখ, কি দু:খ বলতে পারে না, বললে হয়তো বলে, ‘বেশ’ – তাও অশান্তি। অবসাদে জীবন ক্ষয় হয়ে যায়।
দুর্ব্বল হৃদয়ে প্রেমভক্তির স্থান নেই। পরের দূর্দ্দশা, ব্যথা দেখে’, পরের মৃত্যু দেখে, নিজের দুর্দ্দশা, ব্যাথা বা মৃত্যুর আশংকা করে ভেঙে পড়া এলিয়ে পড়া বা কেঁদে আকুল হওয়া – ওসব দুর্ব্বলতা।
যারা শক্তিমান তা’রা যা-ই করুক, তাদের নজর নিরাকরণের দিকে – যাতে ও-সব অবস্থায় আর না কেউ বিধ্বস্ত হয় প্রেমের সহিত তারই উপায় চিন্তা করা, – বুদ্ধদেবের যা’ হ’য়েছিল – ঐ হচ্ছে সবল হৃদয়ের দৃষ্টান্ত।
তুমি ব’লো না তুমি ভীরু, ব’লো না তুমি কাপুরুষ, ব’লো না তুমি দুরাশয়! পিতার দিকে নজর কর, আবেগভরে বল – “ওগো, আমি তোমার সন্তান, আমার আর জড়তা নেই, আর দুর্ব্বলতা নেই, আমি আর কাপুরুষ নই, আমি তোমাকে ভুলে নরকের দিকে ছুটে যাব না, আর তোমার জ্যোতি:র দিকে পিছন ফিরে পিছন ফিরে ‘অন্ধকার’ ‘অন্ধকার’ ব’লে চিৎকার করব না।”
দুর্ব্বলতার সময় সুন্দর ও সবলতার চিন্তা করিও – আর অহঙ্কারে প্রিয় ও দীনতার চিন্তা করিও, – মানসিক স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ থাকিবে।
*Vampire – একজাতীয় বাদুড়; ইহারা ঘুমন্ত জন্তুর রক্ত নির্ব্বিবাদে শোষণ করে।