Published By Subrata Halder, 18 May 2025, 09:27 pm
বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
এবার সিকিম রাজ্যের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। এই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জমকালোভাবে উদযাপন করতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সিকিম সরকার। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দের খবরটি পেল রাজ্যের মানুষ। তা হলো সিকিমে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হল বিলুপ্তপ্রায় স্নো লেপার্ড বা বরফে
থাকা চিতা।
সিকিম সরকারের বন ও পরিবেশ দফতর, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড ফর নেচারের যৌথ উদ্যোগে এই স্নো লেপার্ড সুমারির কাজ করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সিকিমের তিনটি জেলা, গেইজিং, পাকইয়ং এবং মঙ্গনে মোট ২১টি স্নো লেপার্ডের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গেছে। এই ফলাফল সামনে আসতেই খুশি পরিবেশবিদদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও।
স্নো লেপার্ডের উপস্থিতি ধরা পড়েছে পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বসানো ২১০টি ট্র্যাপ ক্যামেরায়। শুধু তাই নয়, সেই ফুটেজে ধরা পড়েছে আরও একাধিক দুর্লভ ও সংরক্ষিত প্রজাতির প্রাণী যেমন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, ব্লু শিপ, হিমালয়ান মাস্ক ডিয়ার, রেড ফক্স এবং হিমালয়ান মারমোট। এই সব প্রাণী শিডিউল-১ তালিকাভুক্ত বিলুপ্তপ্রায় বলে চিহ্নিত। হিমালয়ের কোলে এই স্নো লেপার্ড স্থানীয়ভাবে ‘কুজু’ নামে পরিচিত। যদিও ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই এই প্রাণীর অস্তিত্বের খবর ছিল। তবু এতদিন তার সংখ্যা গণনা হয়নি। এই অভাব পূরণ করতেই এসপিএআই বা স্নো লেপার্ড পপুলেশন অফ ইন্ডিয়ার আওতায় শুরু হয় এই সুমারি।
সিকিমের বন ও পরিবেশ দফতরের মুখ্যসচিব প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন, এই সুমারি একটি মাইলস্টোন। কয়েকটি ক্যামেরায় একসঙ্গে স্নো লেপার্ড ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি পাওয়া গেছে এটি আমাদের পাহাড়ি জীববৈচিত্র্যের প্রমাণ।
সুমারির জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা এলাকার ৫,১৭৯ বর্গকিলোমিটার পাহাড়ি বনাঞ্চলে কাজ চালানো হয়। গেইজিং, মঙ্গন ও পাকইয়ং জেলায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সময় ধরে চলে এই সমীক্ষা। মোট ৯৯টি পয়েন্টে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়। সঙ্গে সরাসরি চোখে দেখা, পায়ের ছাপ পর্যবেক্ষণ করে গণনা করা হয়। এই প্রকল্পে তিন জেলার মোট ৩২ জন স্থানীয় প্রতিনিধি অংশ নেন।
সিকিম সরকার জানিয়েছে, শুধু গণনাই নয়, স্নো লেপার্ড ও অন্যান্য বিপন্ন প্রাণীর সংরক্ষণেও সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গঠন করা হবে বিশেষ দল, বাড়ানো হবে নজরদারি। এছাড়া এই প্রাণীদের বাসস্থান ও আচরণ নিয়ে গবেষণাও শুরু হবে শীঘ্রই। চোরাশিকার বন্ধ করতে ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নেওয়া হবে একাধিক পরিকল্পনা। স্নো লেপার্ডের উপস্থিতি সিকিম ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে বলে জানা গেছে। দুই প্রতিবেশী রাজ্য যৌথভাবে এই প্রাণীর সংরক্ষণে ভবিষ্যতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে এমন পরিবেশবান্ধব সাফল্যকে ঘিরে গর্বিত সিকিম সরকার ও রাজ্যের মানুষ।