Upload By K. Halder at 25th April 2025, 11:41 AM
বঙ্গবার্তার বিশেষজ্ঞ
অনেকেই আছেন ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ডায়েট ও ব্যায়াম করে থাকেন। আর ওজন কমানোর চেষ্টায় সফল হওয়া নিঃসন্দেহে একটি আনন্দের বিষয়। মনে রাখবেন হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া যে কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। ৬ মাসের মধ্যে যদি আপনার শরীরের ওজনের ৫ শতাংশ বা তার বেশি কমে যায়, যেমন ধরুন আপনার ওজন ৬০ কেজি থেকে ৫৭ কেজি, তবে সতর্ক হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে-
১. থাইরয়েডের সমস্যা
হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধির কারণে কারণে মেটাবলিজম তৈরী হয়ে যায়। এর ফলস্বরূপ খাওয়া সত্ত্বেও শরীর পুষ্টি পায়না ও ওজন কমতে থাকে।
২. টাইপ ১ বা অনিয়ন্ত্রিত টাইপ ২ ডায়াবেটিস
রক্তে যদি শর্করা বেড়ে যায় তবে প্রস্রাবের মাধ্যমে শর্করা নির্গত হয়, ফলে ওজন কমে যায়। সময়মতো ডায়াবেটিস শনাক্ত না হলে রোগী অজান্তেই রক্তে গ্লুকোজ বাড়তে থাকে। তাই হঠাৎ ওজন কমতে শুরু করলে ডায়াবেটিস টেস্ট করানো বিশেষ প্রয়োজন।
৩. ক্রোনস্ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস
ক্রোনস্ ডিজিজ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস হলো পাচনতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী ঘাঁ জনিত রোগ বা আইবিডি। ক্রোনস্ মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত যেকোনো অংশে হতে পারে, তবে আলসারেটিভ কোলাইটিস শুধু বৃহদান্ত্র ও মলদ্বারকে প্রভাবিত করে। ক্রোনস্-এ প্রদাহ গভীর স্তরে হয়, আর কোলাইটিসে শ্লেষ্মা স্তরে ক্ষত সৃষ্টি করে। উভয় ক্ষেত্রে পেটব্যথা, ডায়রিয়া, রক্তপাত ও ওজনহ্রাস দেখা দেয়। অন্ত্রে প্রদাহের কারণে খাবার ঠিকমতো শোষণ হয় না।
৪. সিলিয়াক ডিজিজ
সিলিয়াক ডিজিজ হলো একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে গ্লুটেন (গম, যব, রাইয়ে থাকা প্রোটিন) খাওয়ার পর ক্ষুদ্রান্ত্রের শোষণকারী আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এতে পুষ্টিশোষণ ব্যাহত হয়। ফলে ডায়রিয়া, ওজনহ্রাস, রক্তশূন্যতা ও অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৫. অগ্ন্যাশয় বা লিভারের রোগ
পিত্তরস কম হয়ে গেলে হজমের খুবই সমস্যা হয়। ফলে শরীর পুষ্টির অভাবে জমিয়ে রাখা শক্তি খরচ করে ওজন কমিয়ে দেয়।
৬. ক্যান্সার
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, যেমন- প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, শরীরের শক্তি ক্ষয় করে। একে ক্যাশেক্সিয়া বলে। এতে পেশি ও চর্বি দ্রুত কমে যায়, ফলে হঠাৎ শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।
৭. সংক্রমণ বা ইনফেকশন
যক্ষ্মা, এইডস ও প্যারাসাইট (কৃমি, জিয়ার্ডিয়া) জাতীয় সংক্রমনের ফলে ক্ষুধামন্দা, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও পুষ্টি শোষণজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে ওজন দ্রুত কমে যায়।
৮. মানসিক সমস্যা
ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস ডিজঅর্ডার থাকলে অনেক সময় খাওয়ার ইচ্ছা মরে যায়। আবার অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা এমন একটি সমস্যা যেখানে রোগী ওজন বাড়ার ভয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ ধরনের ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের ওজনের ব্যাপারে পরিবারের খেয়াল করতে হবে।
৯. দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বা ফুসফুসের রোগের কারণেও ওজন কমে।
১০. ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার্স রোগী অন্য সব কিছুর সঙ্গে খেতেও ভুলে যায়। তাই তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এছাড়া কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও ওজন কমে যেতে পারে।
ডাক্তার দেখাবেন কখন?
১. ছয় মাসে শরীরের মোট ওজনের ৫ শতাংশের বেশি ওজন কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. দুর্বলতা, জ্বর বা ক্রমাগত পেটের সমস্যা থাকলে এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত না।
৩. লম্বা সময় ধরে খাওয়ার রুচি একদম কমে গেলে চিকিৎসককে জানান।
ওজন কমা যদি অস্বাভাবিক মনে হয়, দেরি না করে ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয়। সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন। কোথায় আছে শরীর ফিট তো সব ঠিক। তাই আসুন শরীরের প্রতি নজর দিন এবং পরিবারের সকলকে সুস্থ রাখুন সমাজকে সুস্থ রাখুন আপনার পারিপার্শ্বিককে সুস্থ ও সবল করে তুলুন।