Upload By K. Halder at 23th April 2025, 1:54 PM
বঙ্গবার্তার বিশেষজ্ঞ
মানুষ যে কোন পরিস্থিতিতে অসুবিধায় পড়লে তাকে সাহায্য করা, ধন্যবাদ বা দুঃখিত বলার মধ্য দিয়েই ভদ্রতার শুরু; সকলেই আমরা এমনটাই জানি বা বুঝি । তবে স্বাভাবিকভাবে ভদ্রতা কথাটা শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভদ্রতা হচ্ছে মূল্যবোধ, সহমর্মিতা এবং অন্যের প্রতি সম্মানবোধের বহিঃপ্রকাশ। এ কথা ঠিক যে জন্মগতভাবে কারও মধ্যে এই ভদ্রতা থাকে না এমনকি একদিনেই কাউকে ভদ্রতা শেখানোও যায় না। এ কারণে শিশুকাল থেকেই এমন কিছু শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন যা তাকে গড়ে তুলবে সাহায্য করবে একজন সংবেদনশীল, সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে। আসুন আমরা জেনে নিই প্রতিটি বাবা-মায়ের কেমন শিক্ষা দেওয়া উচিত তাদের নিজেদের ও পরিবারের শিশুদের।
ভদ্রতা শুধুমাত্র যে বাইরের মানুষের জন্য নয়, ঘরেও বাবা-মা, ভাই-বোন, এমনকি পোষ্য প্রাণীর প্রতি সম্মান থাকা বিশেষ প্রয়োজন ।
যেমন ধরুন কাউকে না বলে কারও ঘরে হঠাৎই ঢুকে পড়া, অনুমতি না নিয়ে কারও জিনিসপত্র না নেওয়া। এর মধ্য দিয়েই শিশু চেনায় তাদের সীমারেখার গুরুত্ব এবং অন্যের প্রতি কীভাবে সম্মান প্রকাশ করতে হয়।
মনোযোগ দিয়ে শোনা
শুধু চুপ চাপ শোনা নয়, মন দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আপনার শিশুকে বোঝাতে হবে যে যখন কেউ কোন কথা বলছে, তখন নিজের উত্তর কী হবে সেটা না ভেবে তার কথায় মনোযোগ দিতে হয়। এই অভ্যাস থেকে গড়ে ওঠে সহানুভূতিশীল সম্পর্ক, ভালো বন্ধুতা এবং মননশীল ব্যক্তিত্ব।
সবকিছু তৎক্ষণাৎ নয়
আপনার শিশুদের বিশেষভাবে শেখাতে হবে যে সব কিছু চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। কারো কথা বলার সময় বাধা না দেওয়া, বা প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য ধৈর্য রাখা-এই আচরণগুলো শিশুদের আত্মনিয়ন্ত্রণ শিখতে সাহায্য করে । এতে তারা শেখে কিভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং অন্যের জায়গা বা সময়কে সম্মান জানাতে হয়। এটি ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শেখা
ভদ্রতা মানে সব কিছুর জন্য ‘হ্যাঁ’ বলা নয়। আপনার শিশুকে শেখাতে হবে কিভাবে নম্রভাবে ‘না’ বলা যায়, আবার কিভাবে অন্যের ‘না’ কে সম্মান করা যায়। এই আচরণ থেকেই জন্ম নেয় পারস্পরিক সম্মান, সম্মতির ধারণা এবং নিজের সীমা নির্ধারণ করার আত্মবোধ।
ভুল হলে তা মানতে জানা
শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি ভুলগুলো বুঝতে শেখাতে হবে। যেমন- কোনো কিছু নোংরা করলে সেটা পরিষ্কার করা, ভুল করলে ‘দুঃখিত’ বলা বা কারো মন খারাপ করলে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করা। এই অভ্যাস শিশুকে একজন দায়িত্বশীল এবং আত্মজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
সাহায্য করার অভ্যাস গড়ে তোলা
কেউ কোন সাহায্য চাওয়ার আগেই এগিয়ে আসার বিষয়ে শিশুদের বোঝানো প্রয়োজন। যেমন- বড়দের ব্যাগ ধরতে সাহায্য করা, বড়দের চেয়ারে বসতে দেওয়া, কাঁদছে এমন কাউকে সান্ত্বনা দেওয়া-এইসব আচরণ শিশুকে একজন করে তোলে সহানুভূতিশীল ও সচেতন মানুষ করে তোলে ।
ভিন্নতাকে সম্মান করা
‘ভদ্র হও’ এই কথাটা প্রায়ই শিশুরা শোনে, কিন্তু কজনই বা শেখে ভিন্নতা মেনে নিতে? শিশুকে শেখাতে হবে, কেউ দেখতে আলাদা, কথা বলায় ভিন্ন, ধর্ম বা সংস্কৃতিতে ভিন্ন হলেই তাকে ছোট করা যায় না। এই শিক্ষা থেকেই তৈরি হয় সহনশীলতা, সৌহার্দ্য এবং মানবিকতা। ভবিষ্যতে এই শিশুরাই হবে বৈচিত্র্য-পছন্দকারী, সহানুভূতিশীল মানুষ, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং একজন সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে।