খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের স্ত্রীর নাম দুটি জায়গার ভোটার তালিকায়

Published By Subrata Halder, 21 May 2025, 10:39 p.m.

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
ভোটার কার্ড বিতর্কে এবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের স্ত্রী কোয়েল মজুমদার। সম্প্রতি দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে স্থানীয় বাসিন্দা পারমিতা দাস অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের স্ত্রী কোয়েলের নাম বালুরঘাট এবং জলপাইগুড়ি দুই জায়গার ভোটার তালিকাতেই রয়েছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেয় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুর দুই জেলার ডিইও তথা জেলাশাসককে এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল।
কমিশন সূত্রে খবর, বিবাহ সূত্রে জলপাইগুড়ি থেকে বালুরঘাটে আসেন কোয়েল। জলপাইগুড়িতে ভোটার কার্ডে তিনি কোয়েল চৌধুরী অর্থাৎ পারিবারিক যে পদবী সেই পদবী ব্যবহার করেই ভোটার কার্ড আছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে বিবাহ সূত্রে বালুরঘাটে এসে নতুন ভোটার কার্ড হয় কোয়েল মজুমদার নামে। অভিযোগ দুই জায়গায় দুই রকম ভোটার কার্ড ব্যবহার করে একই ব্যক্তি একাধিক ভোটদানের ক্ষমতা ভোগ করছেন। তাও আবার তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের রাজ্য সভাপতির স্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয় অভিযোগের ভিত্তিতে অবিলম্বে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে। এই মোতাবেক রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জলপাইগুড়ি এবং বালুরঘাট দুই জেলার জেলাশাসককে অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলেছেন। যদিও মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জলপাইগুড়ি এবং বালুরঘাটে একই নামে ভোটার তালিকায় নাম পাওয়া গেলেও দুজনের এপিক কার্ডের নম্বর আলাদা। অর্থাৎ কোয়েল চৌধুরীর নামের পাশে যে এপিক কার্ড নম্বর রয়েছে কোয়েল মজুমদারের নামের পাশে এপিক কার্ডের নম্বর আলাদা। তাহলে কি একই ব্যক্তি দুটো আলাদা এপিক কার্ড ব্যবহার করে দুই জায়গায় ভোট দিচ্ছেন? কমিশনের পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, একই দিনে একই ব্যক্তির দুই জায়গায় ভোটদান কার্যত অসম্ভব। কিন্তু যদি দুই জায়গায় আলাদা আলাদা দিনে নির্বাচন হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি দুটি ভোট দিতে পারবেন। আর ঠিক এই কারণেই কমিশন বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড নম্বর নিয়ে শুধু এ রাজ্যে নয় দেশজুড়ে তোলপাড় হয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে বহু ভোটার কার্ড বাতিল হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ধরনের ভিভিআইপি ব্যক্তির স্ত্রীর নামে দু’জায়গায় দুটি ভোটার কার্ড কিভাবে থাকতে পারে? কমিশন জানাচ্ছে, বিয়ের আগে কোয়েল চৌধুরী জলপাইগুড়িতে যে ভোটার কার্ড ব্যবহার করতেন বিয়ের পরে কোয়েল মজুমদার হয়ে তিনি বালুরঘাটে অন্য একটি ভোটার কার্ড তৈরি করেছেন। বালুরঘাটে ভোটার কার্ড তৈরীর সময় যদি কোয়েল নির্বাচনী বিধি মেনে ফর্ম ৮ পূরণ করতেন সেক্ষেত্রে সমস্যা হতো না। যে তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব ছিল একমাত্র কোয়েলের ওপরেই। কিন্তু তিনি তা করেননি। নতুন ভোটার কার্ড তৈরির যে ফর্ম ৬ তা পূরণ করেই বালুরঘাটে ভোটার কার্ড করিয়েছেন কোয়েল। সেক্ষেত্রে তার পুরনো কার্ডের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি। ফলে জলপাইগুড়ির পুরনো ভোটার কার্ড এবং বালুরঘাটের নতুন ভোটার কার্ড দুটোই ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে। যেহেতু দুই জায়গায় দুটি পদবী আলাদা এবং দুটি এপিক কার্ডের নম্বরও আলাদা সেক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ হয়নি কমিশনের আধিকারিকদের। স্থানীয় বাসিন্দার পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর এই তথ্য সামনে আসে। প্রাথমিকভাবে এই ভ্রান্তির কথা মেনে নিয়েছে কমিশন। তবে দুই কোয়েল একই ব্যক্তি কিনা তা ভোটার কার্ডের ছবির সঙ্গে চূড়ান্তভাবে মিলিয়ে দেখতে চায় কমিশনের আধিকারিকরা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইআরওকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। যেহেতু এই অভিযোগের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নাম জড়িয়ে রয়েছে তাই এই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হবে একথা জেনেই খুব সতর্কভাবে এই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে চায় নির্বাচন কমিশন। চলতি সপ্তাহেই জেলাস্তর থেকে রিপোর্ট কমিশনে এসে পৌঁছবে এবং তা সরাসরি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল।

08:07