বাইরে ধর্মান্তরকরণ ভিতরে ধর্মনিরপেক্ষতা কেনো এই দ্বিচারিতা, প্রশ্ন বিজেপির

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
বিধানসভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে আক্রমণ করলেন। তিনি অভিযোগ করেন, আপনারা বাইরে ধর্মান্তকরণের কথা বলবেন, আর ভেতরে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা শোনাবেন। এটা চলবে না। গতকাল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের মুসলিম বিধায়কদের নিয়ে করা মন্তব্য নিয়ে দিন বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনেন রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী। সেই আলোচনাতেই বক্তব্য রাখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার সময় বিরোধীরা যখন হইচই করছেন তখন নিজের বক্তব্য থামিয়ে বিরোধীদের বলার সুযোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই সময় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন শঙ্কর ঘোষ।
বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে শঙ্কর ঘোষ বলেন, আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শেখাও। স্বামী বিবেকানন্দের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু সত্যকে ত্যাগ করা যায় না।
তিনি অভিযোগ তোলেন, ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এবং হুমায়ুন কবীর বারবার ধর্মীয় বিভাজনের কথা বলেছেন, অথচ সরকার চুপ থেকেছে। বালুরঘাটের মহিলার দণ্ডী নিয়ে তিনি সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে তৃণমূলের এক মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি কটাক্ষ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নাচতে গিয়ে হাতে গ্লাভস পরেন! অথচ তিনি সব ধর্মের প্রতিনিধিত্বের দাবি করেন।
এখানেই শেষ নয়, বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতিতেও এই আলোচনা নিয়ে শাসক দল এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির মুখ্য সচেতক। তিনি বলেন,বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাসপেন্ড থাকায় তিনি বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তাও মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের জবাব দিতে এসেছেন বলে কটাক্ষ করেন শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, বিরোধী দলনেতা যখন বাইরে, তখন তার কথার জবাব দিতে এসেছেন। আগে নিজের দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের সামলান।
এদিন সরাসরি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে আপনি যা বলছেন তা দু ধরনের মানসিকতার ইঙ্গিত। তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি বলেছেন সত্যের জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করা যায় না। তাহলে আপনি স্বীকার করবেন কি, বিধানসভার সদস্য না হয়েও আপনি বিধানসভা ভাঙার কাজে যুক্ত ছিলেন।
এরপর তিনি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে বলেন, “আপনার দলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, আমরা ৭০, আপনারা ৩০। আপনাদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেব।’ তখন আপনি কী করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আপনার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ধর্মান্তকরণের কথা বলেছিলেন। তখন আপনি চেয়ারের মর্যাদা রেখেছিলেন? আপনি যদি চেয়ারের সম্মান না রাখেন, তাহলে আমরাও রাখতে বাধ্য নই। বিধানসভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শঙ্কর ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাইরে ধর্মীয় মেরুকরণ করবেন, আর ভেতরে এসে ধর্মনিরপেক্ষতার ভাষণ দেবেন, এটা আমরা মানতে পারি না।
এই মন্তব্যের পর বিধানসভায় শোরগোল শুরু হয়। বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভের জেরে অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য ব্যাহত হয়।