Published By Subrata Halder, 08 June 2025, 11:26 p.m.
বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
মাত্র ৯ দিন আগে এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেই ফাইনালে ইতালির ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফরাসী ক্লাব পিএসজি।
এবার সেই একই মাঠ, মিউনিখের আলিয়াঞ্জ এরেনায় আরও একটি জমজমাট ফাইনাল। যেখানে মুখোমুখি হবে কোনো ক্লাব নয়, দেশীয় শক্তি। শিরোপা লড়াইয়ে মাঠে নামবে দুই ইউরোপীয় ফুটবল শক্তি পর্তুগাল এবং স্পেন। লড়াই শুধু দুই দেশেরই নয়, দুই ফুটবল তারকারও। ৪০ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং ১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামালের।
তবে এই ম্যাচটি শুধু শিরোপার লড়াই নয়, বরং আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ডার্বিও। এর আগে একবার করে নেশন্স লিগের শিরোপা জিতেছে দুই দল। পর্তুগাল ২০১৯ সালে নেশন্স লিগের প্রথম আসরে এবং স্পেন ২০২৩ সালে শিরোপা জয় করে। এবার যেই চ্যাম্পিয়ন হবে, তারাই প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বার নেশন্স লিগ জয় করবে।
ম্যাচের বিবরণ
কখন: রোববার, ৮ জুন ২০২৫, রাত 12:30টা
কোথায়: আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা, মিউনিখ, জার্মানি
কিভাবে দেখবেন: ইউরোপ ও বিশ্বজুড়ে উয়েফার ব্রডকাস্ট পার্টনারদের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হবে। স্পেনে আরটিভিই ও উয়েফা.টিভি, পর্তুগালে আরটিপি পর্তুগাল এবং স্পোর্ট টিভি পর্তুগাল এবং আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য ডিজনি প্লাস, ফক্স স্পোর্টস, ফিউবো টিভি এবং অপটাস স্পোর্টস-এ দেখা যাবে।
যেভাবে ফাইনালে উঠে এলো তারা
রবার্তো মার্তিনেজের অধীনে পর্তুগাল এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। গ্রুপ পর্বের তিনটি জয় দিয়ে শুরু করার পর স্কটল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন ড্র করে। কিন্তু এরপর পোল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-১ গোলে জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।
কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্কের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে সেমিফাইনালে উঠেছে ৫-২ গোলের জয়ে। সেমিতে জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নেতৃত্বে তারা ২০০০ সালের পর প্রথমবার জার্মানির বিপক্ষে জয় পায়।
৪০ বছর বয়সেও রোনাল্ডো এই টুর্নামেন্টে গোল করেছেন, ফাইনালে হবেন দলের প্রধান অস্ত্র। পাশাপাশি ব্রুনো ফার্নান্দেজ, হোয়াও ফেলিক্স, রাফায়েল লিয়াও, এবং ভিতিনহার মতো তারকারা দলকে শক্তিশালী করেছে।
স্পেন
ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন। লুইস ডি লা ফুয়েন্তের অধীনে ইউরো-২০২৪ জয়ের পর আরও একটি শিরোপার জন্য প্রস্তুত। গ্রুপ পর্বে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সেরা দল হিসেবে শেষ করে তারা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জয় পায়।
সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৫-৪ গোলের রোমাঞ্চকর জয়ে পৌঁচায় ফাইনালে। ওই ম্যাচে লামিনে ইয়ামাল দুটি গোল করেন। যদিও ম্যাচটিতে ডিফেন্সে দারুণ দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, যা ফাইনালে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
পেদ্রি, ফ্যাবিয়ান রুইজ, আলভারো মোরাতা এবং দানি ওলমোর মতো ফুটবলারদের নিয়ে স্পেনের আক্রমণাত্মক ফুটবল এখন বলতে গেলে অপ্রতিরোধ্য।
কৌশলগত বিশ্লেষণ
পর্তুগাল সম্ভবত কাউন্টার-অ্যাটাকিং কৌশলের উপর নির্ভর করবে, যেখানে রোনালদো, লিয়াও এবং পেদ্রো নেতোর গতি ও ফিনিশিং ক্ষমতা ব্যবহার করবেন কোচ মার্টিনেজ। মাঝমাঠে ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও হোয়াও নেভেসের সৃজনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, স্পেন বল পজেশন নিয়ন্ত্রণ করে মাঝমাঠে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে। পেদ্রি ও ফ্যাবিয়ান রুইজের মাঝমাঠের সঙ্গে ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামসের দ্রুত আক্রমণ তাদের শক্তি। ম্যাচের ফলাফল নির্ভর করবে মাঝমাঠের দখল এবং সেট-পিসে কার্যকরী ব্যবহারের ওপর।
সম্ভাব্য লাইনআপ
পর্তুগাল: দিয়েগো কস্তা; নেলসন সেমেদো, রুবেন দিয়াজ, গনকালো ইনাসিও, নুনো মেন্দেজ, ভিতিনহা, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, হোয়াও নেভেস, বার্নার্দো সিলভা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও পেদ্রো নেতো।
স্পেন: উনাই সিমোন, মিঙ্গুয়েজা, পাও কুবার্সি, ডিন হুইজসেন, চুচুরেয়া, পেদ্রি, ফ্যাবিয়ান রুইজ, লামিনে ইয়ামাল, দানি ওলমো, নিকো উইলিয়ামস, আলভারো মোরাতা।
কোচদের বক্তব্য
রবার্তো মার্তিনেজ (পর্তুগাল): ‘স্পেনের বল পজেশন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অসাধারণ। তবে আমাদের দল যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। আমরা জার্মানির বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামব।’
লুইস ডি লা ফুয়েন্তে (স্পেন): ‘পর্তুগাল একটি শক্তিশালী দল, তাদের খেলোয়াড়দের গতি ও বহুমুখী ক্ষমতা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা আমাদের স্টাইলে খেলব এবং জয়ের জন্য লড়ব।’
প্রেডিকশন
এই ম্যাচটি খুবই কাছাকাছি লড়াই হবে। স্পেনের আক্রমণাত্মক ফুটবল এবং ইউরো ২০২৪-এর সাফল্য তাদের সামান্য এগিয়ে রেখেছে। তবে, রোনালদোর অভিজ্ঞতা এবং পর্তুগালের কাউন্টার-অ্যাটাকিং ক্ষমতা ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। সম্ভাব্য ফলাফল: স্পেন ২-১ পর্তুগাল, তবে অতিরিক্ত সময় বা পেনাল্টি শুটআউটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উল্লেখযোগ্য দিক
রোনালদো বনাম ইয়ামাল: ৪০ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে ১৭ বছরের লামিনে ইয়ামালের প্রথম মুখোমুখি লড়াই ফুটবল বিশ্বের নজর কাড়বে।
রেফারি: সুইজারল্যান্ডের সান্দ্রো শারের (৩৬) এই ম্যাচের রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভিএআর রেফারি থাকবেন সুইজারল্যান্ডের ফেদায়ী সান।
ট্রফি: বিজয়ী দল ৭১ সেমি উচ্চতার ৭.৫ কেজি ওজনের স্টার্লিং সিলভার ট্রফি জিতবে।
সব মিলিয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের আজকের
ফাইনালে উত্তেজনা, দক্ষতা এবং নাটকীয়তার মিশেলে দর্শকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় ফুটবল রাত অপেক্ষা করছে