বঙ্গবার্তার বিশেষজ্ঞ সন্তান বয়ঃসন্ধিকালে পা রাখার পর তাদের জন্য বিশেষ পুষ্টির কথা প্রত্যেকেই চিন্তা করেন। টিনএজার কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগ ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ হয় খুব তাড়াতাড়ি। একটা গাছ সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার সময় ঠিকমতো সার ও জল দিতে হয়, তেমনই কিশোর-কিশোরীদের বিকাশের জন্য প্রয়োজন পুষ্টি। আপনার টিনএজার সন্তানের পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে অবহিত হোন।
কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি চাহিদা কেন আলাদা?
বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন, দ্রুত হারে হাড় ও পেশির বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। এই সময়ে তাদের শক্তির প্রয়োজনও বেশি, কারণ স্কুল, খেলাধুলা, পড়াশোনা এবং সামাজিক কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে তারা। একটি গবেষণা বলছে, এই বয়সে পুষ্টির ঘাটতি হলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, এমনকি পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সন্তানের কী কী পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন?
১. প্রোটিন: প্রোটিন হলো শরীরের বিল্ডিং ব্লক। কিশোর-কিশোরীদের পেশী গঠন, হরমোন উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন অপরিহার্য। গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন তাদের শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামের জন্য ০.৮৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।
প্রোটিনের উৎস: ডিম, মুরগি, মাছ, ডাল, বাদাম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
২. ক্যালসিয়াম: এই বয়সে হাড়ের ঘনত্ব সর্বোচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করে এবং পরবর্তী জীবনে অস্টিওপরোসিস (হাড় ক্ষয়) প্রতিরোধ করে। গবেষণা বলছে, ৯-১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন ১,৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ক্যালসিয়ামের উৎস: দুধ, দই, পনির, ব্রোকলি, টফু এবং ক্যালসিয়াম ফর্টিফাইড খাবার।
৩. আয়রন: কিশোর বয়সে, বিশেষ করে মেয়েদের, আয়রনের প্রয়োজন বেশি। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, যা অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। আয়রনের ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা) হতে পারে, যা ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
আয়রনের উৎস: মাংস, পালং শাক, ডাল, বীজ প্রভৃতি।
৪. জিঙ্ক: জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, জিঙ্ক এর ঘাটতি হলে কিশোর-কিশোরীদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।
জিঙ্ক এ র উৎস: মাংস, সামুদ্রিক খাবার, বাদাম, বীজ এবং ডাল।
৫. ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, প্রায় ৫০% কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে, যা হাড়ের দুর্বলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্যেও ভিটামিন ডি অত্যন্ত জরুরি।
ভিটামিন ডি-র উৎস: সূর্যের আলো, তেল যুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম প্রভৃতি।
৬. ফাইবার: ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার প্রয়োজন।
ফাইবারের উৎস: শাকসবজি, ফল, পুরো শস্য এবং ডাল।
৭. ওমেগা-৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের বিকাশ, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ এর ঘাটতি হলে মনোযোগের অভাব এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ে।
উৎস: সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, ম্যাকারেল), আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড এবং চিয়া বীজ।
সঠিক পুষ্টির অভাবে আপনার সন্তান স্থূলতা, অ্যানিমিয়া ও হাড়ের দূর্বলতার মতো সমস্যায় ভুগতে পারে। তাই কিশোর-কিশোরীর ডায়েটের প্রতি খেয়াল করা খুব জরুরি যেন তারা বাইরে ফাস্টফুড খেয়ে পেট ভরিয়ে না ফেলে, এতে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে তারা রুচি পাবেনা। গবেষণা বলছে, কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ না হলে তাদের শেখার ক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক দক্ষতাও প্রভাবিত হয়। তাই পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বুঝে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা উচিত এবং সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।