বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
টানা সাত ঘন্টা অপারেশন চালিয়ে ফুটবল খেলোয়াড়ের জীবন বাঁচালেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ফুটবল টুর্নামেন্ট চলার সময় মাঠে গোলকিপারের সঙ্গে হয়েছিল সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে পেটে মারাত্মক চোট পান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এম পি এড পড়ুয়া বিশ্বজিৎ লোহার।ইন্টারন্যাল ইনজুরি হওয়ায় রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল প্রচুর।প্রায় ৭ ঘন্টা টানা অপারেশন চালিয়ে বিশ্বজিৎ লোহারের জীবন ফিরিয়ে দিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একদল চিকিৎসক।হাসপাতালের পরিষেবায় খুশি বিশ্বজিৎ
ও তার পরিবার । বর্ধমান বিশ্ব বিদ্যালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনবাগান মাঠে চলছিল আন্ত বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট। তাতে বাংলা বিভাগের সঙ্গে খেলা ছিল ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগের।সেই খেলায় গোলকিপারের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর চোট পায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিএড পড়ুয়া বিশ্বজিৎ লোহার।বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কে
ওই দিন মাঠ থেকেই নিয়ে যাওয়া হর বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।প্রাথমিক চিকিৎসা করে ওইদিন চলে আসে বিশ্বজিৎ। কিন্তু পরে তার পেটে ব্যাথা বাড়তে থাকে। পরের দিন ফের তাঁকে ভর্তি করা হয় বর্ধমান হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আই সি ইউ-তে ভর্তি করা হয়। করানো হয় সিটি স্ক্যান।প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম তৈরি করে বিশ্বজিৎতের চিকিৎসা শুরু হয়। আই সি ইউ থেকে সিটি স্ক্যান করানো হয় ‘গ্রীন করিডর’ করে।
পেটে এত মারাত্মক চোট লাগার কারণ হিসাবে জানা গিয়েছে,মাঠে খেলার সমর গোল করার লক্ষ্যে ফুটবল পায়ে নিয়ে জোর ছুটছিল বিশ্বজিৎ। আর গোল আটকাতে এগিয়ে আসছিল বাংলা
বিভাগের গোলকিপার। ওই সময় গোলকিপার আর বিশ্বজিৎতের মধ্যে জোর ধাক্কা লাগে, আর তাতে পেটে গুরুতর চোট পেয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিএড পড়ুয়া বিশ্বজিৎ মাঠে লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছু ওষুধ দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে বিশ্বজিৎ ফের হোস্টেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে আবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুপার তাপস ঘোষ শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান,ওই পড়ুয়ার জন্য শল্য, মেডিসিন, কার্ডিও বিভাগ সহ মোট ১০ জনের মেডিক্যাল টিম তৈরি করা হয়। তারপর তার পেটে আঘাত লাগা ও ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়া বন্ধে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চোট বেশ মারাত্মক ছিল“। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল মৌসুমী মুখার্জি , অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান সুমন্ত ঘোষ মৌলিক, চিকিৎসক সৌমেন মণ্ডল, চিকিৎসক বিকাশ বিষয়ী, পূর্ণেন্দু দত্ত ও অরিন্দম ঘোষকে পাশে নিয়ে সুপার আরও জানান, বিশ্বজিৎতের রক্তবমি হওয়ায় ইউএসজি করা হয়। তা থেকে বোঝা যায় তার ইন্টারন্যাল ইনজুরি হয়েছে।ঝুঁকি না নিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষের নেতৃত্বে ৭ ঘন্টা ধরে অপারেশন হয়। এরকম অপারেশন খুবই ঝুঁকির।অপারেশন টেবিলে রুগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরা কার্যত বলা যায় অসাধ্য সাধন করে পড়ুয়া ফুটবলারের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন।
বিশ্বজিৎ লোহারের বাবা কার্তিক লোহার বলেন,
আমি সামান্য ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ করি। ছেলে মারাত্মক চোট পাওয়ার পর আমি খুব চিন্তায়
পড়েছিলাম। বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সবাই আমার ছেলের পাশে ছিলেন। সরকারি চিকিৎসায় ছেলে সুস্থ হয়ে উঠছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার বাবুরা অসাধ্য সাধন করে আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছেন।