বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
বুধবার হুগলি জেলার ত্রিবেণীর কুম্ভ মেলার মাঠে আয়োজন হয় যজ্ঞের, হয় কুম্ভ মেলার ধ্বজোত্তোলন। গত তিন বছর মাঘি সংক্রান্তিতে কুম্ভ মেলা হয়েছিল ত্রিবেনীতে।প্রয়াগরাজে যেমন গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর সঙ্গম আছে তেমনি ত্রিবেনীতেও তিন নদীর সঙ্গম।প্রয়াগ হল যুক্তবেনী ত্রিবেনীকে বলা হয় মুক্তবেনী।ত্রিবেনীকে দক্ষিন প্রয়াগও বলা হয়। সেই সঙ্গমস্থলে ৭০০ বছর আগে কুম্ভ হত বলে দাবী মেলা কমিটির।গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার পথে সাধু সন্তরা ত্রিবেনীতে বিশ্রাম নিতেন। মাঘ মাসের সংক্রান্তিতে ত্রিবেনী হয়ে উঠত মিনি কুম্ভ।ইতিহাস বলছে, কানাডিয়ান লেখক এলান মরিনিসের একটি বই থেকে ত্রিবেনী কুম্ভের কথা জানা যায়। এছাড়াও পুরানে ত্রিবেনীর নাম পাওয়া গেছে। স্কন্দপুরান অনুযায়ী কুশদ্বীপের রাজা প্রিয়বন্ত ‘র মোট সাতজন পুত্র ছিলেন,তারা হলেন অগ্নিত্র, মেধাতিথি,বপুস্মান,জ্যোতিষ্মান,দ্যূতিষ্মান,সবন,ও ভব্য। ত্রিবেণী ধামসংলগ্ন এই স্থানে তারা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। সংলগ্ন সাতটি গ্রামে।যেগুলি হল,বাসুদেবপুর,বাঁশবেড়িয়া,নিত্যানন্দপুর,কৃষ্ণপুর,
দেবানন্দপুর,শিবপুর ও বলদঘাটিতে তাদের আশ্রম তৈরী করেছিলেন। তাই এর নাম হয় সপ্তগ্রাম। সেই সপ্তগ্রাম বানিজ্য বন্দর থাকা কালীন এই স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে। যদিও পরবর্তী কালে বিদেশী আক্রমনে এর মাহাত্ম্য কমে যায়।কিন্তু মাঘ সংক্রান্তিতে বহু মানুষ ত্রিবেনীতে স্নান করেন।সেই সূত্র ধরে ত্রিবেনী অনু কুম্ভের জন্ম হয়েছে।মেলা কমিটির চিপ পেট্রন কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,ত্রিবেণীতে একদিনের কুম্ভ মহোৎসব হবে।তবে আগামী দিনে বড় আকারে কুম্ভের আয়োজন করা হবে।বরানগর আলমবাজার মঠের স্বামী সারদাত্মা নন্দ বলেন,ত্রিবেনী প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র।পরাধীনতার গ্লানিতে তার স্বকীয়তা হারিয়েছিলাম আমরা।সেটা পুনরুদ্ধার এবং পুনর্জাগরণ করার জন্য গত তিন বছরের মত এবছরও কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১১-১৩ ফেব্রুয়ারী হবে সেই মেলা।সাধুসন্তরা আসবেন। বহু মানুষের উপস্থিতি হবে।আমরা চাইছি এই মেলাকে হেরিটেজ রূপ দিতে।প্রয়াগরাজে যে দূর্ঘটনা ঘটেছে সেটা যাতে না হয় তার জন্য প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা করবে আশাকরি।আগামী ১১ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয়ার্ধে মেলায় ভীড় জমাবে সাধু সন্তরা। নাগা সাধু থেকে দেশ বিদেশের সাধুরা উপস্থিত থাকবেন। হোম কুন্ডে যজ্ঞ এবং ধর্ম সম্মেলন হবে।পরদিন নগর কীর্তনের পর হবে শাহী স্নান।ভান্ডারা দেওয়া হবে সাধুসন্তদের।হবে ধর্ম আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১০ ফেব্রুয়ারী থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। সেই সময় কুম্ভ মেলা হওয়ায় পরীক্ষার্থী দের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য মেলার চার পাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র করা হচ্ছে না।গতবছর মেলার অনুমতি নিয়ে টালবাহানা হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায়।এবার প্রশাসনও আগে থেকেই তৎপর। প্রয়াগে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য। গতকালই জেলাশাসক দপ্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী,বিধায়ক, পুলিশ সুপার থেকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানান,প্রয়াগের অভিজ্ঞতা থেকে ত্রিবেনী কুম্ভের জন্য সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।পূন্যার্থীরা যাতে নিরাপদে আসতে যেতে পারেন তার দিকে নজর দেওয়া হবে।ত্রিবেনী কুম্ভ যেখানে হবে সেই ঘাটের পাশেই রয়েছে গাজি দরগা।একই সময় সেই দরগায় উরস উৎসব হবে।সেখানেও বহু মানুষ আসেন মেলা বসে এই জায়গায়। তাই দুই উৎসবকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় যাতে থাকে তার দিকেও সতর্ক নজর থাকবে।