বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
রাজ্যের বেসরকারি বাসগুলিতে এবার থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে, আর সেই আয়ের অর্থ ব্যবহৃত হবে ‘যাত্রী সাথী’ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় স্মার্টফোন কেনার কাজে। বেসরকারি বাস মালিকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে পরিবহণ দফতর।
সড়ক নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে চালু হচ্ছে যাত্রী সাথী অ্যাপ। এটি প্রথমে হলুদ ট্যাক্সির জন্য চালু হলেও, বর্তমানে সরকারি বাসেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এবার বেসরকারি বাসেও এই অ্যাপ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে এখানেই।
বেসরকারি বাস চালানোর ক্ষেত্রে এই অ্যাপ ব্যবহারের জন্য প্রতিটি বাসে স্মার্টফোন থাকা বাধ্যতামূলক, যা মালিকদের নিজেদের টাকায় কিনতে হবে। কিন্তু লাভের মুখ না দেখায় অধিকাংশ বাস মালিক স্মার্টফোন কেনার অতিরিক্ত ব্যয় বহনে অপারগ। তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্য বেসরকারি বাসের গায়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবহণ দফতর।
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বেশ কিছু বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বাসের গায়ে বিজ্ঞাপন দেবে এবং এর বদলে বাস মালিকদের অর্থ দেওয়া হবে। সেই অর্থ দিয়ে মালিকরা স্মার্টফোন কিনতে পারবেন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু জানিয়েছেন, পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। তবে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। মালিকরা এই প্রস্তাব বিবেচনা করবেন। তবে, যদি বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি ছ’মাস বা এক বছরের টাকা অগ্রিম দেয়, তাহলে স্মার্টফোন কেনা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাসের গায়ে বিজ্ঞাপন লাগানোর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ, বহু বেসরকারি বাস আর্থিক সংকটের কারণে রাস্তায় নামতে পারছে না। এই বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে মালিকরা শুধু স্মার্টফোনই কিনতে পারবেন না, পাশাপাশি বাসগুলোর জরুরি মেরামতের কাজও করতে পারবেন।
তবে, বিজ্ঞাপন নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বাস মালিকরা। তাদের দাবি, এমন কোনও বিজ্ঞাপন লাগানো উচিত নয়, যা সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, প্রথম দফায় ১৪টি রুটে বেসরকারি বাসে ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপ চালু করা হবে। এই রুটগুলির মধ্যে রয়েছে
79-B, 79-D, KB-21, 219, 219/1, 45, 223, 93, K-1, 46, 46A, 46B, S-184 এবং L-238
এই প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে চালুর জন্য প্রতিটি বাসচালক, মালিক ও কন্ডাক্টারদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করা হবে। সেখানে কিউআর কোড ব্যবহার, অ্যাপে লগ ইন এবং রুট ট্র্যাকিংয়ের নিয়ম শেখানো হবে।
বাসমালিকদের তরফ থেকে আরও একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেসব রুটে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী সাথী অ্যাপ চালু হবে, সেইসব রুটের বেসরকারি বাসগুলোর বিরুদ্ধে চলমান ট্রাফিক কেস ছয় মাসের জন্য মকুব করার দাবি উঠেছে।
যাত্রী সাথী অ্যাপ চালুর মূল উদ্দেশ্য বাস পরিষেবা আরও স্বচ্ছ ও নিরাপদ করা। এই অ্যাপের মাধ্যমে বাস কোথায় রয়েছে, কতক্ষণে গন্তব্যে পৌঁছবে, অতিরিক্ত গতিতে চলেছে কিনা—এসব বিষয় ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট বুকিংও করতে পারবেন।
পরিবহণ দফতরের আশা, বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত অর্থ মালিকদের আর্থিক চাপ কমাবে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিত করবে, ফলে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন হবে।
বেসরকারি বাসে বিজ্ঞাপন, অর্থ আসবে ‘যাত্রী সাথী’ প্রকল্পে
