Upload By K. Halder at 27th April 2025, 07:57 AM
বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
জগন্নাথ মানেই তার সঙ্গে বলরাম ও সুভদ্রা থাকার কথা।
তাছাড়া জগন্নাথ ও রথযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত মাসির বাড়িও। অথচ কলকাতার গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ জগন্নাথ কোনোদিন মাসির বাড়ি যায়নি। সুভদ্রা, বলরাম ছাড়া জগন্নাথ এখানে একাই ১২৫ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
কলকাতা মেডিকেল কলেজের সামনেই গোবিন্দ সেন লেনের এই ঐতিহ্য সেই ১৯০০ সাল থেকে। চুনিমণি দাসীর হাত ধরে বৌবাজারের এই হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দিরের পথ চলা শুরু। পুরীর জগন্নাথদেব যে নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে তারই অবশিষ্ট অংশ দিয়ে এই জগন্নাথদেব তৈরি। যে জগন্নাথ তার পেটের মধ্যে শালগ্রাম শিলা ধারণ করে রয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার জগন্নাথ সম্ভবত কলকাতা শহরের সবচেয়ে বড় জগন্নাথ বিগ্রহ বলে জানালন সেবাইতরা। যেহেতু এই জগন্নাথের কোন মাসির বাড়ি নেই তাই রথযাত্রার আটদিন ধরে দে পরিবারের বিভিন্ন আত্মীয়দের বাড়িতেই ভোগ খেতে যেতেন জগন্নাথ। তবে দিনকাল বদলের সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলেছে। এখন আর জগন্নাথ এবাড়ি সেবাড়ি ঘুরে বেড়ান না। মন্দিরের প্রাঙ্গনে ধুমধাম করে জগন্নাথের রথযাত্রা হয়। আর আত্মীয়রাই এখন ভগবানের কাছে আসেন তাকে ভোগ খাওয়াতে। বর্তমান সেবাইত তপন কুমার দে জানালেন, তার বাবা প্রায় ৩৫ বছর ধরে জগন্নাথ দেবের সেবা করে এসেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রথ যাত্রাই হোক বা দোলযাত্রা, অঙ্গরাগ হোক বা রাসযাত্রা, জগন্নাথের কোন উৎসবেই আর নিমন্ত্রণ করা হবে না। ভক্ত আর ভগবানের মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক এই মন্দির প্রাঙ্গণ। যেমন কথা তেমনই কাজ। কিন্তু আজও উৎসবের দিনগুলিতে বিনা নিমন্ত্রনেই বহু মানুষের ভিড় হয় এই হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে। যতক্ষণ মানুষ আসেন ততক্ষণ চলে ভোগ বিতরণ। তপন কুমার দে জানান, কোন স্বপ্নাদেশ তারা পাননি বটে কিন্তু মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন যে জগন্নাথ দেব রয়েছেন। চরম আর্থিক সংকট সত্বেও কিভাবে জগন্নাথের নিত্যপুজো, নিত্য অন্নভোগ থেকে রথযাত্রা বা অন্যান্য উৎসব পালন করা হবে তা নিয়ে যখন তারা দিশেহারা তখন বিগ্রহ নিজেই পুজো বা ভোগ সব কিছু ঠিক জোগাড় করে নেন স্বয়ং জগন্নাথ। তপনবাবুর দাবী কোথা থেকে যেসব জোগাড় হয়ে যায়, টাকার যোগান হয়ে যায় তা বুঝতেই পারি না। শুধু এটুকু বুঝতে পারি তিনি আছেন, জগন্নাথ আমাদের সঙ্গেই আছেন। বর্তমানে দুই ভাই তপন কুমার দে ও রাজকুমার দে সেবাইত হিসেবে এই জগন্নাথ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করেন। দুজনেই জানিয়েছেন, ১৯৫৬ সালের জেট ট্রাস্টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরে তৈরি হয়েছিল। তাদের রেখে যাওয়া গচ্ছিত সম্পত্তি ছাড়া এই মন্দিরের নিজস্ব আর্থিক যোগান কিছুই নেই। তাই তিন বছর এই দুই ভাইয়ের পকেট থেকেই আয়োজনের যাবতীয় খরচ বহন করতে হচ্ছে । যা ক্রমে সাধ্যের বাইরে যেতে বসেছে। কলকাতা পুরসভা গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ তকমা দিয়েছে এই মন্দিরকে। কিন্তু মন্দির চালানো বা পরিচালন ব্যয় যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় কোন আর্থিক সাহায্য মেলে না। আক্ষেপ দুই ভাইয়ের।তাদের বিশ্বাস জগন্নাথ নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করে নেন। পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে দীঘায় যে জগন্নাথ মন্দির তৈরি হয়েছে বলা ভালো তাদের ইষ্ট দেবতারই নতুন বাড়ি। তাই জগন্নাথের নতুন বাড়ি দেখতে যেতে চান হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইতরা।