Published By Subrata Halder, 04 May 2025, 03:25 pm
প্রচন্ড পরিমাণে গরম পড়তে শুরু করেছে, একটু রোদ লাগলেই বা একটু হাঁটলেই শরীর থেকে ঘাম পড়তে শুরু করে এবং হঠাৎই শরীরটা খারাপ খারাপ লাগে এবং এটা অস্বাভাবিক কোন কিছু নয়
কিন্তু শুধু গরম লাগার অনুভূতি বাড়তে বাড়তে কখন যে হিট স্ট্রোকে পরিণত হয় তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। তাই হিট স্ট্রোকের যে লক্ষণগুলো জানা বিশেষ জরুরি, তাই সময় থাকতেই নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন সাথে সাথে অন্য কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকেও বাঁচাতে পারবেন ।
কেন হিট স্ট্রোক হয়?
শরীরের গরম ধারণের ক্ষমতা বা হোমিওস্ট্যাসিস ব্যর্থ হলে হিট স্ট্রোক হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেসব কারণে ব্যর্থ হয় তার মধ্যে প্রধান হলো অত্যধিক গরম ও আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকা ও শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঘাম বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় বের হতে না পারা। একে বলে ক্ল্যাসিকাল হিট স্ট্রোক। আবার রোদের প্রচণ্ড তাপে বাইরে যারা কাজ করেন বা মাথায় রোদ নিয়ে দীর্ঘ সময় জার্নি করেন, তারাও এই সময়ে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। একে এক্সারশনাল হিট স্ট্রোক বলে। উচ্চ তাপমাত্রায় অভ্যস্ত না হলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই দুই ধরনের হিট স্ট্রোক বিভিন্ন কারণে হতে পারে-
১. শরীরের জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খেলে ঘাম কম তৈরি হয়, ফলে শরীরের তাপ বের হতে বাধা পায়।
২. দীর্ঘসময় ধরে কঠোর শারীরিক পরিশ্রম: গরমে অতিরিক্ত ব্যায়াম ও শ্রম করলে বা সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের সময় হিট স্ট্রোক ঘটে যায় অনেক সময়ই।
৩. বয়সজনিত ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা: শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
৪. বিভিন্ন ওষুধ জনিত সমস্যা অনেক সময়ই কিছু কিছু ওষুধ শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়। তাই অতিরিক্ত গরমে আপনার প্রতিদিনের কাজ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. গরম পোশাক বা বদ্ধ পরিবেশ: অতিরিক্ত মোটা কাপড় পরা বা বদ্ধ স্থানে তাপ জমে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
যেসব কারণে এই হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে বা হতে পারে, সম্ভব হলে সেইসব পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় বাস্তব ভাবে অনেক সময়ই এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না। তাই হিট স্ট্রোক হতে লাগলে আপনার শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তা বিস্তারিত জানুন। লক্ষণগুলো জানা থাকলে খুব তাড়াতাড়ি সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
১. থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ১০৪ ফারেনহাইট অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা। যদি থার্মোমিটার না থাকে তবে ত্বক গরম, শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া দেখেও বোঝা যায়। ঘাম কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া দেখেও বোঝা যায় ।
২. মাথা ঘোরা অনুভব হওয়া বা ভারসাম্য হারানো।
৩. মাইগ্রেনের মতো তীব্র মাথাব্যথা।
৪. অসংলগ্ন কথা বলা প্রলাপ বকা যেমন, সময়-স্থান ভুলে যাওয়া।
৫. খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
৬. হ্যালুসিনেশন হওয়া প্রলাপ বকা বা অদ্ভুত আচরণ করা।
৭. হার্টবিট অনিয়মিত হতে পারে। পালস কম থাকা।
৮. হাইপোটেনশন বা রক্তচাপ কমে যাওয়া।
৯. পেশীতে ব্যথা বা খিঁচুনি ।
১০. বমি বমি বা ডায়রিয়া, কখনও কখনও রক্ত পায়খানা।
১১. শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত নেওয়া
১২. চোখে ঝাপসা দেখা বা পেশী দুর্বল লাগা।
হিটস্ট্রোক অনেক সময়ই প্রাণঘাতী হতে পারে, তাই এই লক্ষণগুলো খেয়াল করলে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই উক্ত রোগীকে রোদ বা গরম পরিবেশ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক ঠান্ডা কোনো ঘরে বা গাছের নিচে নিয়ে যান। যদি আপনি নিজের মধ্যেও লক্ষণগুলো খেয়াল করেন, তবে দ্রুত কোন ঠান্ডা স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেই সঙ্গে সাহায্যের জন্য কাউকে জানান।
গলার টাই, চাপা জামা ও বেল্ট জাতীয় পোশাকের অংশ ঢিলা করে দিন। রোগীর আশেপাশে কাউকে ভিড় করতে একদম দেবেন না। জায়গাটি খোলামেলা রাখুন। ভেজা টাওয়েল ঘাড়ে, মাথায় ও বগলে চেপে ধরুন। সম্ভব হলে মুখ ও মাথা ধোয়ার ব্যবস্থা করুন।
এসব প্রথমিক চিকিৎসা চলতে চলতেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কেননা সাময়িক ভাবে এই পদ্ধতিগুলো রোগীকে রক্ষা করতে পারলেও শরীরের ভেতরের কোন ক্ষতি হয়ে থাকলে তা নির্ণয় করতে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই লাগবে। নিজে নিজে সুস্থতার বিষয়টি চিকিৎসককে বুঝতে দিন। হিট স্ট্রোক এর কারণে মৃত্যুও হতে পারে তাই অবিলম্বে যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা সম্ভব। প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন সানগ্লাস ব্যবহার করুন প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা জল খান। এগুলি নিয়মিত পালন করতে পারলে আপনি দূরে থাকতে পারবেন হিট স্ট্রোক থেকে।