ফিচার

বঙ্গের আগামী বিধানসভা ভোট ও রাজ্যের বিরোধী রাজনীতি

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী:

বঙ্গবার্তা,

আগামী বছর ২০২৬, রাজ্য দুটি বড় নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছে। জুন মাসে রাজ্য বিধানসভার ভোট। ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার ভোট। কিন্তু, রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে- তাদের ঘুম এখনও ভাঙ্গেনি। আদৌ ভাঙবে কি না তার আগাম চিহ্ন এখনও দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য, চলতি বছরের শীত এখনও কাটেনি। ফলে ঘনকুয়াশায় বোধ হয় সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপিকে রাজনৈতিক ময়দানে তেমন দেখা যাচ্ছে না।
বিরোধী দলের নেতারা কেউ কেউ তাকিয়ে আছেন দিল্লির দিকে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে কে কার হাত ধরবে তার নিশ্চয়তার অপেক্ষায়। কেউ আতঙ্কিত ভোটের আগে দল ভাঙার আশঙ্কায়। একই সঙ্গে বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে,রাজ্য দলের সভাপতির আসন কি ভাবে নিজের জন্য নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ততায়।

এদিকে শাসক দল, তেমনভাবে প্রকাশ্যে তেমন কিছু না বললেও আসন্ন বাজেট অধিবেশনকে হাতিয়ার করে জেতার লক্ষে কয়েক পা এগিয়ে থাকার চেষ্টা করছে। আসলে, শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, সারা দেশের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে অনুদান ভিত্তিক রাজনীতির আবর্তে। যা শুরু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ” লক্ষীর ভাণ্ডার” কন্যাশ্রী সহ নানা অনুদান প্রকল্পের মাধ্যমে,আজ তা সারা দেশে নির্বাচনী জয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী রাজ্যের বাজেট পেশ করবেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচের্য। নবান্নের আনাচে কানাচে খবর, ” লক্ষীর ভান্ডার” প্রকল্পে ব্যাপক বরাদ্দ বাড়তে চলেছে। মাসিক ২ হাজার থেকে একলাফে বেড়ে তা তিন হাজার হতে চলেছে। একই সঙ্গে কৃষক ভাতাও বাড়বে অনেকটাই। যা ময়দানের রাজনীতির চেয়েও বড় আঘাত আনবে বিরোধী দলগুলির প্রতি।
একই সঙ্গে, আগামী বিধান্সভা নির্বাচন সামনে রেখে ব্লক পর্যন্ত শাসকদল দলীয় স্তরে গুছিয়ে নিতে যাচ্ছে সংগঠন। যাতে বুথস্তর পর্যন্ত রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে বিরোধী দলকে শুধু বেগ দেবে তাই না,বুথ ম্যানেজেও কোনও খামতি থাকবে না ।
একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের নির্বাচনে বুথ পোলিং এজেন্টের একটি বড় ভূমিকা আছে। তা যেমন, ভোটকেন্দ্রে জাল ভোটার চিহ্নিত করা তেমনই, ভোট শুরুর আগে ইভিএম এর মকপোল করা, ভোটের শেষে কত ভোট পড়ল, ইভিএমের ব্যাটারির চার্জের অবস্থান সহ ফর্ম সি তে সই করা।
হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের পর ইভিএমের সাতপাঁচ আজ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখন সুপ্রিমকোর্ট এর বিবেচনার আওতায় চলে এসেছে। অথচ, বিগত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে বিরোধীরা বিপুল সংখ্যক বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি। এমনকি বিগত বিধানসভা নির্বাচনে ৭০ টি কেন্দ্রে জেতা বিজেপিও বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি। আর, এখনও এ রাজ্যের বিরোধীদের ঘুমই ভাঙছে না। বুথে জবরদস্ত এজেন্ট না দিতে পারলে দিল্লির ডেইলি প্যাসেজ্ঞার নেতারা যে তাদের জেতাতে পারবে না তা গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে প্রমান হয়ে গিয়েছে।


একই সঙ্গে, স্থানীয় স্তর ও রাজ্যস্তরে বিরোধী দলগুলি যদি এখন থেকেই মানুষের সমস্যা তুলে ধরে আন্দোলন সংগঠিত করা শুরু করতে না পারে তা হলে শুধু দিল্লির নেতাদের মুখ দেখিয়ে জনসভায় ভিড় বাডানো যেতে পারে কিন্তু তা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত করা যাবে না। এই রাজ্যে তার নজিরও ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই রাজ্যে যত দিন যাচ্ছে বিজেপির ভোট কমছে।
কিন্তু নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা ও রাজ্যের মানুষের মন বুঝতে পারার দক্ষতার অভাবে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট আজও ঘর গুছেতে পারল না। আর কংগ্রেস তো মুখাপেক্ষীতার অপর নাম হয়ে উঠেছে। এত দিন, অধীর চোধুরীর কঠোর অবস্থান মোটামুটি বুঝিয়ে দিয়েছিল বামরাই তাদের শরিক হবে। কিন্তু শুভঙ্কর সভাপতি হওয়ার পর নিজেই যেখানে ভ্রান্তিতে, সেখানে দলীয় কর্মীদের অবস্থা কি তা সহজেই অনুমেয়। এই দলের একটি আংশ চায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করুক। আর এক দল চায় বামদের সঙ্গে জোট। এখন অবশ্য রাজ্যে নিজেদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে৷ একক ক্ষমতায় লড়ার পক্ষে দলের মধ্যে জনমত জোরদার হচ্ছে। অর্থাৎ, যারা নিজেরাই জানেনা- পথের অবস্থান কোথায়, তারা নামবে কোন পথে ? ফলে এদের যা হওয়ার তাই চলছে।

শেষ কথায় মনে রাখতে হবে, বিরোধী দলগুলি যদি তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে হারানোর মতো নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ভোটের আগে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, তা হলে রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের বড় অংশ আবারও চলে যাবে তৃণমূলের দিকে। তখন পরবর্তী বিধানসভাতেও বাম,কংগ্রেসের আজকের অবস্থানের কোথাও কোনও পরিবর্তন হবে না। ভাড়ার শূন্যই থেকে যাবে। আর বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা আজকের থেকেও অনেক কমে যাবে।

12:47