।। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।।

অমৃত কথা

শ্রীশ্রীঠাকুর—অকৃত্রিম নিঃস্বার্থ ভালবাসার রাজ্যে দাঁড়ায় যখন মানুষ, তখন সে সসীম হ’য়েও অসীম। একেই বলে মায়ার পারে যাওয়া। রবীন্দ্রনাথের আছে—
“সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।”
কথাগুলি বড় সুন্দর। বোধ না থাকলে এমনতর লেখা বেরোয় না। তাঁর যে আলো, সে আলো অখণ্ড, আঁধার বা ছায়া দিয়ে বারিত বা ব্যাহত হয় না তা’। সে আলো তাই ছায়া সৃষ্টি করে না, সৃষ্টি করে কায়া। ছায়াটা মিথ্যা। কায়াটা বাস্তব। প্রকৃত জ্ঞান কখনও আলেয়ার সৃষ্টি করে না, তা বাস্তবায়িত হয় নব-নব রচনায়। সীমার মধ্যে হয় অসীমের নব-নব সংহত প্রকাশ। ছেলেবেলায় ঘাসের বুকে শিশিরবিন্দুকে দেখতাম, যেন গোটা সূর্য্যকে প্রতিফলিত করছে সে। দেখতাম আর মনে হ’তো শিশিরবিন্দু যদি জগৎপ্রসবিতা সূর্য্যকে বুকে বহন ক’রে বেড়াতে পারে, তবে আমি যত ক্ষুদ্রই হই, আমিই বা পারব না কেন পরমকারুণিক পরমপিতাকে বুকে বহন ক’রে বেড়াতে, শিশিরবিন্দুর মতো তাঁকেই ঠিকরে দিতে আমার সারাটা জীবন দিয়ে? এইসব কথা ভাবতাম আর বুকখানা যেন আনন্দে দশহাত হ’য়ে উঠতো।
(আলোচনা প্রসঙ্গে ৪র্থ খণ্ড, ২২-১০-১৯৪২)