রাজ্যের ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়েছে ‘ভূত’। সেই ভূত তাড়িয়ে ২৬ শে’র নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের মহাসমাবেশ থেকে সেই ইঙ্গিতই দিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, ভোটার তালিকা পরিষ্কার করতে হবে। তার জন্য রাজ্যের প্রতিটা জেলার সভাপতি, ওয়ার্ড সভাপতি সহ সমস্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা নেতৃত্বের কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করবেন না বলেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি।
মমতার অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার থাকতে পারে। পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গুজরাতের ভোটাররা এই তালিকায় রয়েছে। বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এ দিন তিনি কয়েকটি ভোটার তালিকা তুলেও দেখিয়েছেন।
তবে এই ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার পরিস্কার করার কাজ জেলাস্তরের নেতৃত্বকে দিয়েছেন। এই কাজে যাতে কোনও গাফিলতি না হয়, সে বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা।
জেলায় তৃণমূলের নীচু স্তরের কান পাতলে জেলা, ব্লক এবং অঞ্চলের নেতাদের ওপর ক্ষোভ যে অন্য স্তরে পৌঁছেছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জানেন। তাই এ দিন ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করার জন্য বুথ সভাপতিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, জেলার নেতাদের বুথ সভাপতিদের মনে পড়ে শুধু ভোটের সময়। অতয়েব তাঁর কোথায় একটা সংশয় আছে যে জেলা, ব্লক এবং অঞ্চল স্তরের নেতাদের ওপর বুথে কর্মীদের ক্ষোভ বাড়ছে। সেটারই মেরামতির জন্য এই কর্মসূচিকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। তিনি নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ভোটার তালিকা দিয়েই শুরু হোক খেলা। যে জেলা সভাপতি এটা পারবেন না, আমি তাঁকে পরিবর্তন করতে বাধ্য হব।”
এ দিন জেলাস্তরে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজ কতটা তার জন্য একটি ৩৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কমিটিতে রয়েছেন, তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সি, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, মানস ভুঁইয়া, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরবহ হাঁসদা সহ মোট ৩৫ জন। এই নেতারা সপ্তাহে চারজন করে প্রতিদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তৃণমূল ভবনে বসবেন। জেলা থেকে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাতে হবে তাঁদের। জেলাতে কাজ করতে কী কী অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন যাবতীয় সবকিছু শুনবেন। তাঁরাই তৃণমূল নেত্রীকে জানাবেন। মোদ্দাকোথা, জেলায় নেতারা কে কী রকম কাজ করছেন তাঁদের ওপর নজর রাখতেই এই কমিটি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
এ দিন মমতা বলেন, “আমি দেখছি দু-একটা নেতা হয়েছেন। তাঁরা নেতা কিনা জানি না। হটাৎ গজিয়ে তোলা। কেউ বলছে আমি দলীয় প্রতীক মানি না। তার পরই নেতার নাম বলছে। আমি তৃণমূল বুঝি না। আমি ওই দাদার রাজনীতি করি।” তিনি এই সব সমাজমাধ্যমে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। বলেন, “আমি সমাজমাধ্যম রোজ দেখি। কে কী বলছে, কে কী করছে, সবটাই আমার নজরে আছে।” প্রতীক না থাকলে যে তাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হতে পারতেন না, তা-ও বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
আরজি কর কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়ের ও নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে ব্লকে ব্লকে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। সেটা হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। এর মাঝে তৃণমূল ব্লকস্তরে কোনও কর্মসূচি হয়নি। এ বার ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করার কাজ শুরু করতে চলেছে তৃণমূল। এভাবেই জেলায় সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের বিধানসভা ভোটের আগে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার উদ্যোগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। আর এটা দিয়েই ২০২৬ সালে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হল।