বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
একুশে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের পেছনে আইপ্যাকের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে। এবার সেই আইপ্যাকের বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। তৃণমূলের সঙ্গে ২০২১এর বিধানসভা নির্বাচনে যুক্ত থাকা ভোট কুশলী সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি সংবাদ মাধ্যমে। এদিন বাংলায় বেসরকারি একটি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলে দুর্নীতি শুরু করেছে ব্যাগপ্যাক। তারাই এই পথটা শুরু করেছে। এক জায়গায় আট দশটা নাম ভাসিয়ে দিয়েছে। ভিন রাজ্যের লোক টিকিট পেতে এককোটি দুকোটি টাকা দিতে চাইছে। টিকিট পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা চাইছে তারা। তিনি এও বলেছেন আইপ্যাক আসলে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্যাকআপ করতে চায়।
এদিন স্পষ্টভাষায় মদন মিত্র বলেন তৃণমূল কংগ্রেসে কেউ যদি দুর্নীতি শুরু করে থাকে তাহলে সেটা হাঁসপ্যাক বা ব্যাকপ্যাক এর মত সংস্থাগুলি। বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে থেকেই তা হয়েছে। তারাই এই পথটা খুলে দিয়েছে এক একটা জায়গায় আটটা দশটা নাম ভাসিয়ে দিয়ে। তোমায় দেবো তোমায় দেবো তুমি টাকা দাও তুমি টাকা দাও।
মদন মিত্রের দাবি তাদের অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই এমনকি অ্যারেস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। সবকিছুই হয়েছে।
মদন মিত্র বলেন, আমি তৃণমূল কংগ্রেসের টাকার খেলা নিয়ে সরব হয়েছিলাম। তাতে এমন ভাবে প্রচার হয়েছিল যাতে মনে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবটা জানা আছে। আমি করজোড়ে, পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে বলছি, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী নয়, অনুগত। আমার বুক ছিঁড়লে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যাবে। আমার কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখ পেয়ে থাকলে আমি রাজনীতি ছেড়ে চিরকালের জন্য বাড়িতে বসে যাব। মদন মিত্র বলেন, বাইরে থেকে কিছু লোক এসেছেন তারা বলছেন এক কোটি লাগবে দুকোটি লাগবে পয়সা নিয়ে নাও। এতে যদি লেগে যায় তো লেগে গেল। না হলে পয়সা গেল। মদন মিত্র বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর স্বচ্ছতা একই জিনিস-হংসপাখায় কখনো দাগ লাগেনা।
এদিন সরাসরি তার কাছে প্রশ্ন করা হয় প্রার্থী করে দেওয়া হবে এই নামে টাকা তোলা হয়েছে এমনটাই কি ছিল তার অভিযোগ? জবাবে তৃণমূল বিধায়ক স্পষ্ট বলেন সবটাই করেছে আইপ্যাক। সরাসরি তিনি বলেছেন, নির্বাচনের নামে নৈবিদ্যের নারু তুলে নিয়ে গেছে ওরা। টাকা নিয়ে কিছু লোকের নাম প্রস্তাব করেছে ওরা। তবে নির্বাচন লড়েছে আমাদের দলের ছেলেরা। আইপ্যাকের ছেলে কোথায়! খায় না মাথায় দেয়! তিনি বলেন, আইপ্যাক মানে তৃণমূলকে প্যাকআপ।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল বিধায়কের এই অভিযোগের পর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এই নিয়ে কি বলছে ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাক। যদিও এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিন এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ হাকিম এবং প্রাক্তন মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। এদিন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের শৃংখলা রক্ষা কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফিরহাদ হাকিম বলেন, মদন মিত্র যা বলছেন কথাগুলো সংবাদমাধ্যমে না বলে দলের অন্দরে বললেই ভালো হতো। দলের ভিতরেও এই বিষয় নিয়ে বলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। উনি প্রবীণ নেতা সেটা করলেই ভালো করতেন।
অন্যদিকে কুনাল ঘোষ বলেন, উনি যা বলেছেন তা ঠিক না ভুল তা নিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে যা বলার তারাই বলবেন। তবে ২০২৬ এর
ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ এমনিতেই শাসক দলের ভিতরে
এখন দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। আর আইপ্যাকের প্রস্তাব ও নিয়োগ কর্তা ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তাই বিষয়টি অনেকদূর গড়াবে তা নিশ্চিত বলা যায়।
দলের বিরুদ্ধেই মদন বান, অস্বস্তি শাসকদলের
