পীযূষ চক্রবর্তী : অতীতকে কেউ ভোলে না, কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের একটা বড় অংশ। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মৌলবাদীরাও। যাদের জন্য একটা সময় ঘটি বাটি রেখে ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের লোকজন আজ তারাই কিনা তাঁদের প্রিয়। আর যাঁদের বলিদান সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল সেই তাঁদের উত্তরাধিকারীরাই এখন মৌলবাদীদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন। ফল ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত ভেঙে গঠিত হয় স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রী হলেন লিয়াকত আলী খান। মূলত সিংহভাগ মুসলিমদের নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। কিছু সংখ্যক হিন্দু যাঁরা পাকিস্তান প্রদেশের অন্তর্গত বসবাস করতেন তাঁরা আশ্রয় নিলেন সেখানে। তবে স্বাধীনতার পরে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে একটা বিভেদ শুরু হয়। বিশেষ করে বাংলাভাষী যাঁরা ছিলেন তাঁদের উপর আক্রোশ বাড়তে থাকে। শুরু হয় বাঙালিদের উপর অত্যাচার। দিন দিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, পাবনায় অত্যাচারের মাত্রা চরম হতে থাকে। প্রশাসনকে বার বার অভিযোগ জানানো হলেও তারা নিষ্ক্রিয় থাকে। অসহায়তা বোধ করতে থাকেন বাংলাভাষীরা। ১৯৬৮ সাল থেকে অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে বাংলাভাষীদের উপর। বাধ্য হয়ে তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধ বাহিনী। যে বাহিনীর নেতৃত্বে সামনের সারিতে ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। বাঙালিদের বাঁচার তাগিদে এরপর শুরু হল লড়াই। প্রশাসনের সাহায্যে বাংলাভাষীদের ওপর চলতে থাকে উর্দুভাষীদের আক্রমণ। সেই আক্রমণ সামাল দিতে ভারতের শরণাপন্ন হয় পূর্ব বঙ্গের লোকেরা। ভারতীয় সেনা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাহায্যে পাকিস্তানকে যুদ্ধে হারাতে সক্ষম হয় পূর্ববঙ্গের আন্দোলনকারীরা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে গড়ে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ভেঙেই তৈরি হয় বাংলাদেশ।প্রধানমন্ত্রী হন তাজ উদ্দিন আহমেদ। ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ মুজিবর রহমান। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু নামে পরিচিতি লাভ করেন মুজিবর।অনেক কঠিন লড়াইয়ের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন মুজিবর কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর আমলে প্রভূত উন্নতি হয় ভারতের প্রতিবেশী দেশটির। একের পর এক বাণিজ্য নগরী গড়ে ওঠে। বিশ্বের মানচিত্রে আলাদা মাত্রা পায় পোশাক শিল্প। হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতিও রক্ষা পায়। মাঝে বিএনপি-র খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছিল। মৌলবাদীরা সেই সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরে পুনরায় হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই অত্যাচার কমতে শুরু করে।। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট মাসে হাসিনাকে সরানোর জন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশি মৌলবাদীদের মদতে ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। আন্দোলনের মাত্রা এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে পুলিশকে বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়। মৃত্যু হয় শতাধিক ছাত্রের। এরপরই আন্দোলনের মাত্রা ভয়ংকর আকার ধারণ করে। ক্ষমতাচ্যুত হতে হয় শেখ হাসিনাকে। দেশ ছেড়ে ভারতের আশ্রয় নেন তিনি।তবে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সেদেশে নৈরাজ্য শুরু হয়। একের পর এক বিএনপি নেতাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেল থেকে ছাড়া হয় খালেদা জিয়াকেও। হামলা শুরু হয় একের পর এক আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর। বাধ্য করা হয় রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে। সঙ্গে শুরু হয় সংখ্যালঘু হিন্দু নিধন। হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর লুটপাট, মারধরের ঘটনা প্রতিদিন ঘটতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ভারত বিদ্বেষ ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। আগামী দিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে আরও খারাপের দিকে যাবে তা বলাই বাহুল্য।