ভুঁই ফোড় বাইক চোর

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,

তিনবার পুলিশ কে ধোকা দিয়ে পালানো বাইক চোর বাসুদেবের নাগাল এখনও পায়নি পুলিশ। তার মধ্যেই এবার আর এক বাইক চোর কালনা পুলিশকে ধোকা দিয়ে পালালো।

ধোকা দিয়ে পালানো কুখ্যাত বাইক চোর বাসুদেব মণ্ডল এখন পুলিশের হিট লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল আর এক বাইক চোর সুজয় মল্লিকের নাম। বাইক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত সুজয় পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বাথরুম যাওয়ার অছিলায় পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে সুজয় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। কালনা থানার পুলিশ এখন হন্যে হয়ে এই বাইক চোরের খোঁজ চালাচ্ছে ।

কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এসডিপিও রাকেশ চৌধুরী জানিয়েছেন, সুজয় মল্লিকের বাড়ি কালনার তালবোনা এলাকায়। বাইক চুরিতে বেশ সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিল এই সুজয়। সম্প্রতি কালনা থানার পুলিশ বাইক চুরির অভিযোগে সুজয় মল্লিক কে গ্রেপ্তার করে। সোমবার ধৃত সুজয় কে কালনা মহকুমা আদালতে তদন্তকারী অফিসার । তদন্তের প্রয়োজনে ধৃত সুজয়কে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ হেপাজতে থাকাকালে সুজয় অসুস্থতা অনুভব করায় মঙ্গলবার ভোরে সুজয় মণ্ডলকে কালনা মহকুমা আদালতে ভর্তি করা হয়।এদিন দুপুরে পুলিশ কে ধোঁকা দিয়ে বাইক চোর সুজয় হাসপাতাল থেকে বেপাত্তা হয়ে যায়। পলাতক অভিযুক্ত সুজয়ের সন্ধান পেতে সমস্ত রকম ভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে এসডিপিও জানান।

সুজয়ের মতই আর এক কুখ্যাত বাইক চোর বাসুদেব মণ্ডল। পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে তিনবার পালিয়ে যাওয়া বাসূদেব এখন রাজ্যের বিভিন্ন থানার পুলিশের হিট লিস্টে রয়েছে। বাসুদেব প্রথম কালকাতার বাগুইহাটি থানার পুলিশকে ধোকা দিয়ে পালায় । তার পর অনেক কষ্টে পুলিশ তাকে জালে পুরলেও গত বছরের ৯ জুলাই শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে পুলিশের ভ্যানগাড়ি থেকে নেমে বাসুদেব পালিয়ে যায়। তারপর ফের পুলিশের চোখে কালনা মহকুমা আদালত চত্ত্বর থেকে পালায় বাসুদেব। সেই থেকে এখনও অব্দি পুলিশ বাসুদেব মণ্ডলের নাগাল পায় নি।

কুখ্যাত চোর বাসুদেব মণ্ডলের বাড়ি হুগলী জেলার বলাগড় থানার আকতারপুর এলাকায়।তাঁর চোর বনে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে প্রেম কাহানি ।পুলিশ সূত্রে খবর প্রেয়সীদের বাসনা পূরণের অর্থ জোগাড় করতে ’চুরিতে’ হাত পাকায় যুবক বাসুদেব। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বছর ৩৯ বয়সী বাসুদেব হয়ে ওঠে দক্ষিণবঙ্গের এক কুখ্যাত চোর। কলকাতার নিউটাউন ও বাগুইহাটি থানা থেকে শুরু করে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলী জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্তাদের রাতের ঘুম সে কেড়ে নেয়। বিভিন্ন চুরির ঘটনায় জড়িত বাসুদেব নামটাই এখন পুলিশের কাছে কার্যত যেন ত্রাসের নাম হয়ে উঠেছে।

ধুরন্ধর বাসুদেব তাঁর চুরির সাম্রাজ্য প্রায় গোটা দক্ষিনবঙ্গ জুড়েই বিস্তার করেছে। বাগুইহাটি থানার পুলিশের কাস্টডি থেকে পালানোর বেশ কয়েক মাস পর ধরা পড়ে বাসুদেব“ । তা জানতে পেরে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে কুখ্যাত চোর বাসুদেব মণ্ডল কে হেপাজতে নেয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশ । তাকে জেরা করে পুলিশ একাধিক চুরির কিনারা করে।উদ্ধার হয় বাসুদেবের চুরি করা মোটর বাইক সহ বহু চোরাই সামগ্রী। জামালপুর থানার পুলিশ বাসুদেবকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে । সেখান থেকে বাসুদেবের ঠাঁই হয় বর্ধমান জেলে জেলে যাওয়ার পরেও পুলিশকে নিস্তার দেয় না চৌর্যবৃত্তিতে সিদ্ধহস্ত বাসুদেব ।

গত বছরের ৯ জুলাই সকালে বাগুইহাটি থানার পুলিশ বর্ধমান জেল থেকে নিয়ে গিয়ে বাসুদেব মণ্ডলকে বারাসাত আদালতে পেশ করে। ওইদিন বিকেলে পুলিশের জাল গাড়িতে করে বাসুদেবকে ফের বর্ধমান জেলে নিয়ে আসা হচ্ছিল।ওই সময় পুলিশ গাড়ি শক্তিগড়ে পৌছাতেই বাসুদেব শৌচাগারে যাওয়ার জন্যে পুলিশকে বলে । পুলিশ তাঁকে শৌচাগারে যেতে দিলে সেখান থেকে পালায় ।

২০২৪ এর সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমদিকে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার পুলিশ আগ্নেআস্ত্র ও কার্তুজ সহ বাসুদেব মণ্ডলকে পাকড়াও করে। গ্রেপ্তারের পরদিন পুলিশ তাকে কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করে। ওই দিন আদালতের লকআপ থেকে বাসুদেবকে বের করে এজলাসে হাজির করাতে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ । তখনই সে পুলিশকে বোকা বানিয়ে আবার পালিয়ে যায় ।সেই থেকে আজও পুলিশ বাসুদেবের নাগাল পায় নি। তারই মাঝে পুলিশ কে ধোকা দিয়ে আর এক বাইক চোর সুজয় মল্লিকের পগার পার হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ যথেষ্টই বিড়ম্বনায় পড়েছে।