Published By Subrata Halder on 02 May 2025 at 08:26 pm
বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
কাশ্মীরের পহেলগামের বৈশরনে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুটি দেশই সামরিক হামলার আভাস দিয়েছে। এরফলে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যে এশিয়াতেও একই পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কোনোমতেই আরেকটি যুদ্ধ চায় না অন্য দেশগুলি।
পহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল বরাবর সপ্তম দিনেও দু দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাবিনিময় হয়েছে বলে এনডিটিভি ও অ্যাসোসিয়েটেড
প্রেসের খবর।
২০১৯ সালে কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হওয়ার পর এবারেও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। যুদ্ধকালীন
পরিস্থিতি দুই দেশেই।
ভারত ও পাকিস্তান বহু বছর ধরেই পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। তবে দুই দেশেরই দাবি তাদের অস্ত্রগুলোর উদ্দেশ্য যুদ্ধ শুরু করা নয়, প্রতিরোধ করাই উদ্দেশ্য।
এক্ষেত্রে ভারতের নীতি হলো প্রথমে ব্যবহার না করা। ভারত কেবল তখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যখন তাদের সেনাদের ওপর বা ভারতের ভূখণ্ডের ওপর পারমাণবিক হামলা হবে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের নীতি ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স বা সম্পূর্ণ পরিসরে প্রতিরোধ কৌশল। ভারতের মতো বড়, শক্তিশালী ও ধনী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর পারমাণবিক বা গতানুগতিক সামরিক হামলার মোকাবিলায় পাকিস্তানের এই প্রস্তুতি।
তবে প্রথমে ব্যবহার না করার নীতিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে পাকিস্তানে, তারা মনে করছে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে, সেক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়নি। সবার সংস্থা,
এপির তথ্য অনুসারে, ভারতের তুলনায় কম সামরিক শক্তির কারণে পাকিস্তান বাস্তবিক অর্থে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা রাখে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
তবে ভারত বা পাকিস্তান কোনো দেশই কিন্তু নিশ্চিতভাবে জানে না অপর দেশের কাছে ঠিক কি ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত। এদিকে, পাকিস্তান প্রথম পরীক্ষা করে ১৯৮৮ সালে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে, ভারতের আছে প্রায় ১৭২টি। অবশ্য কিছু বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের অস্ত্রসংখ্যা আরও বেশি, প্রায় ২০০টি হতে পারে। তবে উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল,
চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে পরস্পরকে তাদের পারমাণবিক স্থাপনা তথ্য সরবরাহ করবে। ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় শুরু হয়। এরপর থেকে তারা টানা ৩৪ বছর ধরে এই তালিকা বিনিময় করেছে।
তবে, ভারত-পাকিস্তান কেউই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র সম্প্রসারণ প্রতিরোধ চুক্তিতে সই করেনি। এই চুক্তিটি বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির বিস্তার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে গঠিত।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রায়শই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে।
তবে ২২ শে এপ্রিল পেহেলগামের ঘটনা ছিল ভিন্ন। ২৬ জন পর্যটকের উপর এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভারত সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলার পর পাকিস্তানের একটি ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। ভারতের দাবি সেটি ছিল একটি সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবির।
এরপরে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এক পাইলটকে আটক করার দাবি করে পাকিস্তান। পরবর্তীতে সেই পাইলটকে মুক্তি দেওয়া মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
তবে বিশ্লেষকরা জানান, ওই ঘটনা একটি বিষয় নিশ্চিত করেছে, সেটি হলো পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে হামলা চালাতে সক্ষম ভারত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত দুই দেশই তেমন কোনো নাটকীয় পদক্ষেপ নেয়নি। তবে মঙ্গলবার ২৯ শে এপ্রিল এলওসি বরাবর আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় ভারতীয় একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এরপর ভারতীয় রাফালকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেট বিমানের তাড়া করার কথা জানায় সে দেশের সামরিক বাহিনী।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ সব মানুষের।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করবেন। একই সঙ্গে অন্যান্য বিদেশি শক্তিগুলিকেও এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে চলমান পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে মিত্র দেশ সৌদি আরব ও ইরান। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। দুই দেশের আরেক শক্তিশালী প্রতিবেশী চীনও তাদের সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার এই উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংঘের মহাসচিব। আন্তর্জাতিক স্তরে সকলের দাবী যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। ভারত সরকারের বক্তব্য তারা শান্তিতে বিশ্বাসী, কিন্তু পাক জঙ্গীরা ধর্মের নাম নিয়ে যে ভাবে নিরীহ জঙ্গীদের খুন করেছে,খুনের পর প্রধানমন্ত্রীকে বলে দিও বলে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে এরপর ভারতের পক্ষেও কি চুপ করে থাকা সম্ভব ? কারণ পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয় থেকেই তো বারবার ঘটছে সন্ত্রাস বাদী আক্রমন। এবার তা চূড়ান্ত সীমা পার করেগেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বের উন্নত দেশ গুলির রাষ্ট্রনায়কদের কাছে স্পষ্ট করেছে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরোধী।