অভিজিৎ বসু: এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম মার্জিন টু মেইনস্ট্রিম অর্থাৎ প্রান্ত থেকে মূলস্রোতে।
আর ওদের কর্ম যজ্ঞও তাই। প্রান্তিক মানুষদের মূলস্রোতে ফেরানোর একটি উদ্যোগ। এই সমাজসেবী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হায়দ্রাবাদের অবসরপ্রাপ্ত আই. এ.এস চন্দনা খান। কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা শুধুই নিজেদের স্বার্থে আর নিজেদের জন্য বাঁচেন না। যারা ভাবেন অন্য মানুষদের কথা। আর তাই চন্দনা খান নিজের কর্মজগতে সাফল্যের পাশাপাশি তিনি তৈরি করেছিলেন এই সংস্থা। তিনি একজন যশস্বী চিত্রশিল্পী, কবি ও সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
তাঁর হাতে তৈরি এই সংগঠন টি বোলপুর ও তার আশেপাশের নয়টি গ্রামে কাজ করে, যেমন পিয়ার্সনপল্লী, তমশুলডাঙা, দীঘিডাঙা, পারুলডাঙ্গা, শ্রীনিকেতন সহ বোলপুরের নানা জায়গায় কাজ করছেন তাঁরা। গ্রামের প্রান্তিক আদিবাসী পিছিয়ে পড়া ছেলে আর মেয়েদের একটু শিক্ষা দান করা। তাদেরকে একটু আলোর মুখ দেখানোর চেষ্টা করা। যাতে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তার জন্য বোলপুর সংলগ্ন এলাকায় নটি জায়গায় স্কুল চালান তাঁরা। স্থানীয় কিছু ছেলেরা যারা সবাই স্নাতক ও একজন শিক্ষক এদের পড়াশোনা করতে সাহায্য করেন।
বর্তমানে যাঁর হাতে তৈরি এই সংস্থা সেই চন্দনা খান আজ আর নেই। যাদবপুরের কিছু প্রাক্তনী এই সংস্থাকে চন্দনাদির স্বপ্নকে সফল করতে চেষ্টা করছেন প্রাণপণে। আর তাই তাঁরা বোলপুরের বিভিন্ন জায়গায় পার্ক করে, স্কুল করে, হাতেকলমে মেয়েদের কাজ শিখিয়ে তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করছেন। যেটা জীবনে সবথেকে বেশি জরুরী। কারণ যাতে এই ধরনের ছেলে মেয়েরা কোনও নেশায় জড়িয়ে না যায়। তাই পার্ক করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। তাদের খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আর তাই পারুলডাঙা গ্রামে এমন একটি শিশুদের জন্য পার্ক এর উদ্বোধন করা হলো বুধবার চন্দনা খান এর স্বপ্নকে সফল করতে।
এই পার্কের উদ্বোধন করে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সুমন ধর বলেন, যে শিশুদের জন্য এই গ্রামে খেলার জন্য পার্ক তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে এই নিয়ে এটি পঞ্চম পার্ক করা হলো। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সমাজসেবী ও আদিবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বিশিষ্ট মানুষ সুবোধ মিত্র। তিনি বলেন এটি খুব ভাল উদ্যোগ। এই পার্ক এর উদ্বোধন করা হয় খুব ঘরোয়া ভাবেই। স্থানীয় পারুলডাঙা গ্রামের মেঠো মানুষজন হাজির হন এই পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
পারুল ডাঙা খেলার মাঠের পাশে একটু ছোটো জায়গায় এই পার্কটি পেয়ে স্বভাবতই শিশুরাও বেশ খুশি। দোলনা, আরও নানা খেলার জিনিস পেয়ে সবাই হৈ হুল্লোড় করে খেলায় মেতে উঠেছে। আর খুশি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরাও বেশ খুশি তাদের গ্রামে চলে মেয়েদের খেলার একটা জায়গা হলো বলে। গ্রামের মাঠের পাশে এই ছোট্ট জায়গায় যে পার্ক করা হলো এটি বেশ ভালো লেগেছে তাদেরও।
শুধু মাত্র পড়াশোনা করা ও কিছু হাতের কাজ শিখিয়ে সমাজে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ করা নয়। এর সাথে তাদেরকে মানসিক বিকাশের জন্য এই ধরনের গ্রামে গ্রামে পার্ক করা হচ্ছে। যাতে এইসব গ্রামের শিশুরাও নিজের মতো করে হেসে ঘুরে বেড়িয়ে খেলতে পারে। তাদের শৈশব যাতে নষ্ট হয়ে না যায়। চন্দনা খান এই সংস্কৃতি-মনস্ক মানুষটির মন যে কতটা মাটির কাছাকাছি ছিল, এই সংগঠনই তার নিদর্শন। আর তাই তিনি এই মাটির কাছের মানুষগুলোকে কাছে টেনে নিতেই এই সংগঠন তৈরি করেন তিনি। যাতে তাদের মুখে একটু হাসি ফোটে। আজ তিনি নেই তবু তাঁর কাজ করে চলেছেন বেশ কিছু জন। কেউ হায়দরাবাদ থেকে অবসর জীবন কাটাবার সময় থেকে সময় করে,অর্থ আর শ্রম দিয়ে সাহায্য করে চলেছেন এই সংস্থাকে। আবার কেউ কলকাতা থেকে এই কাজের দেখভাল করছেন নিজের মতো করেই।
এইভাবেই এই সংস্থা তার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে এগিয়ে চলেছে এই ‘মার্জিন টু মেনস্ট্রিম’ নিজের মতো করেই। প্রচেষ্টা বলে দিচ্ছে স্বপ্ন সত্য হতে চলেছে। বলছে সময়।