যোগাসনে নতুন মাত্রা যোগ বাংলার মেয়েদের

বঙ্গবার্তা ব্যুরো,
গত জাতীয় গেমসের আসরে যোগাসন ডেমনস্ট্রেশন গেমস হিসেবে থাকলেও এবার তা মূল ইভেন্টে স্থান পেয়েছে। জাতীয় গেমসে সফল বাংলার যোগাসনের মেয়েরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের দলে জায়গা করে নিয়েছেন। সাফল্যের সোনালি দিনে এই বাংলার মেয়েদের উঠে আসা অত্যন্ত নিম্নবিত্ত ঘর থেকে। যার পিছনে রয়েছে লড়াইয়ের ছবি। সাধারণ ভাবে যোগাসন মানে আমাদের কাছে কেবলমাত্র ফিটনেস বাড়ানোর খেলা। কিন্তু অ্যাডভান্স যোগাসনে বাড়তি কিছু । সেই বাড়তি চাহিদা মেটাতে যোগান বাড়তি প্রয়োজন। ঋতু মণ্ডল হুগলির হিন্দমোটরের মেয়ে।বাবা রাজমিস্ত্রী। মা গৃহবধু, বাড়িতে দাদা অসুস্থ হওয়ার পরে যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। দাদাকে দেখেই যোগব্যায়াম শুরু রীতুর। বলছিলেন, দাদার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শ মত বাবা দাদাকে যোগাসনে ভর্তি করে দেয়। দাদাকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। হিন্দমোটরের উদয়ন সংঘ ক্লাবে আমি যোগা শিখেছি।দাদাই আমার কোচ। জাতীয় গেমসে যাওয়ার সময় সেভাবে কেউ খোঁজ রাখেনি। সেদিনের খোঁজ না রাখা মানুষগুলোই এখন অভিনন্দনের হাত বাড়াচ্ছেন। রীতু বলছেন,পদক ছিনিয়ে আনতে না পারলে কেউই মনে রাখবে না জানতাম। আশাকরি এবার পরিবর্তন আসবে জীবনে। এশিয়ান গেমসকে পাখির চোখ করে আগামীর প্রস্তুতি শুরু করতে চান রীতু।
মুর্শিদাবাদের কান্দিতে থাকে শিল্পা দাস। পাড়ার এক পরিচিত দিদিকে দেখে এবং তার পরামর্শে দশ বছর বয়সে যোগাভ্যাস শুরু। যোগাভ্যাসের প্রচলিত ধারণায় শরীরকে যতটা নমনীয় করতে হয় তার থেকে বেশি নমনীয়তা প্রয়োজন অ্যাডভান্স যোগায়। তারজন্য পরিশ্রমও বেশি। ফিজিক্যাল এডুকেশন নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করা শিল্পা ফিজিক্যাল এডুকেশনেই জীবন গড়তে চায়।
সর্বশ্রী মণ্ডলের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানে। বাবা যোগব্যায়ামের শিক্ষক। তাঁর কাছে যোগ শিক্ষার হাতখড়ি। এর পাশাপাশি স্বপ্না পাল এবং সৌমেন দাসের কাছে গত পাঁচ বছর ধরে শিখছেন। ফিজিক্যাল এডুকেশন নিয়ে পড়াশোনা করা সর্বশ্রী বলছেন, রিদিমিক যোগার আলাদা কোন পরিকাঠামো নেই বাংলায়। আমরা প্রত্যেকেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গানের তালে তালে এটা প্র্যাকটিস করি।
সাথী মন্ডল তৃতীয় শ্রেণী থেকে যোগাসন করছে। প্রথমে এই খেলায় আসার তার কোন পরিকল্পনা ছিল না। প্রতিবেশী স্বপ্না পালকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাবা টোটো চালান।মা বেসরকারি হাসপাতালের নার্স। যোগাকে বাহন করে জীবনের রাজপথে এগোতে চায় ওরা। রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যে অর্থ এবং চাকুরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এবার কলকাতায় ফিরে প্রতিশ্রুতির কতটা পালন হয় তা দেখার প্রত্যাশায় সকলেই, কারণ তার উপরেই গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের পথ চলা।